পারলো না বাংলাদেশ। জেতা হলো না সিরিজ। ইতিহাস গড়া হলো না শারজায়। আরো একবার সঙ্গী হলো আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারের লজ্জা। রাহমানুল্লাহ গুরবাজের শতক আর ওমরজাইয়ের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সুযোগ হয়েছে হাতছাড়া।
শারজায় সোমবার (১১ নভেম্বর) সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। প্রথম দুই ম্যাচে দুই দলেরই একটা করে জয় থাকায় এই ম্যাচ রূপ নেয় অলিখিত ফাইনালে। যেখানে ৫ উইকেটের জয়ে শেষ হাসি আফগানিস্তানের।
এইদিন টসে জিতে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ২৪৪ রান তুলে টাইগাররা। মাহমুদউল্লাহ করেন ৯৮ বলে ৯৮ রান। জবাবে লড়াই জমলেও শেষ পর্যন্ত ৪৮.২ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় আফগানিস্তান।
সোমবার বাংলাদেশ একাদশ সাজায় দুই পরিবর্তন নিয়ে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত চোটে পড়ে ছিটকে যান ম্যাচ থেকে। তার বদলে একাদশে আসেন জাকির হাসান। অন্যদিকে তাসকিন আহমেদকে বিশ্রাম দিয়ে অভিষিক্ত হন নাহিদ রানা।
নিয়মিত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেহেদী মিরাজ। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের নেতৃত্ব দিতে এসে জিতেন টস। তাতে খানিকটা সুবিধাই পায় বাংলাদেশ। কেননা আগের দুই ম্যাচে জয় পায় আগে ব্যাট করা দল।
শুরুটা ভালো ছিল বাংলাদেশের। বেশ কয়েকবার ভাগ্যের সহায়তা পেলেও থিতু হয়ে উঠেছিলেন দুই ওপেনার। তানজিদ হাসান ও সৌম্য সরকার রান তুলছিলেন পাল্লা দিয়েই। ৮ ওভারে দু’জনে যোগ করেন ৪৯ রান।
এরপরই বাঁধে বিপত্তি। ৮.৩ ওভারে ওমরজাই ফেরান সৌম্যকে। ৫৩ রানের জুটি ভেঙে ফেরেন বোল্ড হয়ে ২৩ বলে ২৪ করে৷ স্কোরবোর্ডে আর কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই পরের ওভারে ফেরেন তানজিদ, ২৯ বলে ১৯ রানে থামেন তিনি।
জোড়া উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে নেয়ার চেষ্টা করেন প্রায় এক বছর পর ওয়ানডে দলে ফেরা জাকির হাসান ও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেহেদী মিরাজ। তবে তখনই জাকির (৪) ফেরেন অনাকাঙ্ক্ষিত রান আউটের শিকার হয়ে।
মাত্র ৫ রানের মাঝে ৩ উইকেট হারানোর পর তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে হাল ধরার চেষ্টা করেন মিরাজ। তবে হৃদয় পারেননি ভরসা হয়ে উঠতে। ১৪ বলে মাত্র ৭ রানে রশিদ খানের ঘূর্ণিতে বোকা বনেন তিনি। সব মিলিয়ে সিরিজটা ভুলেই যেতে চাইবেন হৃদয়, সিরিজের তিন ম্যাচে তার রান মাত্র ২৯।
১৪.৪ ওভারে ৭২ রানে তাওহীদ হৃদয় ফেরার পর শঙ্কার কালো মেঘ দেখা দেয় বাংলাদেশ দলের আকাশে। তবে মেহেদী মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ মিলে তা দূর করেন। পঞ্চম উইকেট জুটিতে দু’জনে মিলে সামলে নেন দলকে। যোগ করেন ১৮৮ বলে ১৪৫ রান।
মিরাজ একটু দেখেশুনে আগালেও, মাহমুদউল্লাহ তার চিরায়ত নিয়মেই পৌঁছেন মাইলফলকে। ৫০ পূরণ করেন ৬৩ বলে। অন্যদিকে নিজের শততম ওডিআই ম্যাচে পেলেন চতুর্থ ফিফটির দেখা পান মিরাজও, যদিও বল খেলেন ১০৬টি।
৪৬ ওভার শেষে ভাঙে এই জুটি। ১১৯ বলে ৫৭ করে ওমরজাইকে ক্যাচ দেন মিরাজ৷ এরপর জাকের আলি (১), নাসুম আহমেদ (৫) সুবিধা করতে না পারলেও রান বাড়ান মাহমুদউল্লাহ। ছিলেন শতকের পথেই। তবে শেষ দিকে এসে ৩ বলে ৪ রানে সমীকরণ মেলাতে পারেননি।
আজমতুল্লাহ ওমরজাই ৩৭ রানে নেন ৪ উইকেট।
জবাব দিতে নেমে আফগানিস্তানের প্রথম উইকেটের পতন হয় ৭.৪ ওভারে ৪১ রানে। সাদিকুল্লাহ আতালকে (১৪) ফেরান অভিষিক্ত নাহিদ রানা। শারজার মন্থর উইকেটেও ধারাবাহিকভাবে গতি ঝড় তুলে স্ট্যাম্প ভাঙেন তার।
১৪ওভার শেষে হয় দ্বিতীয় উইকেটের পতন। মোস্তাফিজুর রহমান নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে ফেরান রহমত শাহকে। ২২ বলে ৮ করেন তিনি। তৃতীয় উইকেটের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ২০.১ ওভার নাগাদ, এবার হাশমতুল্লাহ শাহিদিকে (৬) ফেরান মোস্তাফিজ।
৮৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দলকে বিপদমুক্ত করেন রাহমানুল্লাহ গুরবাজ ও আজমতুল্লাহ ওমরজাই। দুজনে গড়ে তুলেন সমান ১০০ রানের জুটি৷ এই জুটি ভাঙে গুরবাজ মিরাজের শিকার হলে। আউট হবার আগে অবশ্য শতক তুলে নেন এই আফগান।
ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট শতক তুলে গুরবাজ থামেন ৫ চার ও ৭ ছক্কায় ১২০ বলে ১০১ রানে। ১৮৪ রানে চতুর্থ উইকেটের পতনের পর ৪ রান যোগ হতেই গুলবাদিন নাইবের উইকেটও হারায় আফগানরা। তাকেও ফেরান নাহিদ।
এরপর ওমরজাই ও মোহাম্মদ নাবি মিলে সামলে দেন বাকিটা। ৪৮ বলে অপরাজিত ৫৮ রানের যুগলবন্দীতে নিশ্চিত করেন জয়। ওমরজাই ৭৭ বলে ৭০ ও ২৭ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ নাবি। বাংলাদেশের হয়ে জোড়া উইকেট নেন নাহিদ ও মোস্তাফিজ।
Discussion about this post