ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) ছাত্রদলের সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতাসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোর ৩টার দিকে সেনাবাহিনী ক্যাম্পাসে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনার পর শুক্রবার ভোরেই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি বাতিল করা হয়েছে এবং এক নেতাকে বহিষ্কারসহ ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।
জানা যায়, শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের কৃষিগুচ্ছ ভর্তি–ইচ্ছুকদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সামনে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে ব্যানার সাঁটান। তবে রাতে অজ্ঞাত পরিচয়ের কেউ সেসব ব্যানার ছিঁড়ে নর্দমায় ফেলে দেয় বলে অভিযোগ ওঠে।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদল নেতাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় সেখানে উপস্থিত এক বহিরাগত ছাত্রদল নেতাকে মারধর করেন হলের শিক্ষার্থীরা। পরে ওই ছাত্রদল নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের বালুচর ও নয়াবাজার এলাকার লোকজন নিয়ে এসে আবাসিক শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেন।
এরপর পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি বাঁশ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থ হলে সেনাসদস্যরা এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা মো. আবু সাঈদ রবিসহ ছয়জন আহত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ঝামেলার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু মারামারি হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। পরে আমরা পুলিশ ও সেনা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করি।’
এদিকে, এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের পদত্যাগ চেয়ে ক্যাম্পাসের দ্বিতীয় গেটের সামনে সড়কে অবস্থান নেন।
এ ব্যাপারে সিকৃবি ছাত্রদল নেতা আবু সাঈদ জানান, রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাইরে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে ছাত্রদল ব্যানার টানিয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সমর্থক কিছু শিক্ষার্থী ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে দেয়। এ নিয়ে প্রশ্ন করতে গেলে ওই শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের কর্মীদের ওপর চড়াও হন। তিনি দাবি করেন, যারা ব্যানার ছিঁড়েছে, তারা পদ-পদবি না থাকলেও ছাত্রলীগের সমর্থক।
এদিকে, এ সংঘর্ষের ঘটনায় সিকৃবি ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি বহিষ্কার করা হয়েছে সিকৃবি ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাহেদুল ইসলাম রোমেনকে। ঘটনাটি তদন্তে কেন্দ্র থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও প্রচার সম্পাদক শরীফ প্রধান শুভকে নিয়ে দুই সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ২৭ অক্টোবরের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের বরাত দিয়ে কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। স্থানীয় ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তবে কমিটিতে থাকা শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে পাস করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে গেছেন, এরপর আর নতুন কমিটি গঠিত হয়নি।
Discussion about this post