বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর এ বিষয়ে বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এতে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের ফাঁসি না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
সোমবার (২১ অক্টোবর) এইচআরডব্লিউ তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। তাতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বিদ্রোহের সময় যে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে তার বিচারের উদ্যোগ তাৎপর্যপূর্ণ। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যের বিরোধিতা করে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ চলাকালীন গণহত্যার অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৪ জনের (প্রকৃত সংখ্যা ৪৬ জন) বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ন্যায়বিচারের বিষয়ে আপনার সরকারের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানায়। বিচারিক প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ এবং মূল স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে সংশোধনী প্রস্তাব করার আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে আমরা প্রশংসা করি।
কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে কিছু সংশোধনীর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড না দেওয়া। এইচআরডব্লিউ বলেছে, মৃত্যুদণ্ডের ওপর একটি স্থগিতাদেশ গ্রহণ করুন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মৃত্যুদণ্ড রহিত করার পদক্ষেপ নিন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সব পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে। এটি সহজাত নিষ্ঠুর, অস্বাভাবিক শাস্তি এবং মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তাই এই শাস্তি অপসারণের সুপারিশ করছে এইচআরডব্লিউ।
আইনের ২১ (২) ধারায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দাবি করা হয়। বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, রুয়ান্ডার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গ টানা হয়। এ ছাড়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে মৃত্যুদণ্ড রহিত করার লক্ষ্যে ফাঁসি কার্যকরের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার জন্য গৃহীত একটি প্রস্তাবের কথা স্মরণ করে দেওয়া হয়।
Discussion about this post