রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণে চাপ বাড়ছে। রাষ্ট্রপতি নিজে থেকে পদত্যাগ করবেন, নাকি সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে—এটাই মূল আলোচনা। রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের পদ্ধতি কী হবে, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে তা স্পষ্ট হতে পারে।
রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সমাবেশ ও বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে এ সপ্তাহের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করা হয়। একই দাবিতে শাহবাগ ও বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে ইনকিলাব মঞ্চসহ কয়েকটি সংগঠন।
এ ছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, পাবনা, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার, ফেনী, মেহেরপুর, নড়াইল ও ঝিনাইদহ থেকে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও একই দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে গতকাল দুপুর থেকে ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে বঙ্গভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নেন কয়েক শ বিক্ষোভকারী। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁদের একটি অংশ বঙ্গভবনের সামনের ব্যারিকেড (প্রতিবন্ধক) ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। রাত পৌনে ২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা বঙ্গভবন এলাকা ছেড়ে যান।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, গত দুই দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বক্তব্য এবং শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভে রাষ্ট্রপতির বিদায়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতি নিজে থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে ভালো। না হলে সরকারের পক্ষ থেকে এ সপ্তাহের মধ্যেই একটা অবস্থান পরিষ্কার করা হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার পতনের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতিকে বহাল রাখার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিক নানা বাধ্যবাধকতার কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল এ বিষয়ে তাড়াহুড়ো না করার পক্ষে অবস্থান নেয়। কিন্তু শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ নেই, এমন মন্তব্য করার পর রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকার ও শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কারও কারও সন্দেহ, হঠাৎ রাষ্ট্রপতির এ ধরনের বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নতুন কোনো ষড়যন্ত্রও হতে পারে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গত সোমবার সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল।’
এদিকে সরকারের অন্য একটি সূত্র জানায়, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম গতকাল দুপুরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেছেন। রাষ্ট্রপতির অপসারণের বিষয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ।
Discussion about this post