বরগুনার বেতাগী উপজেলার মাহমুদা। আল্ট্রাসনোগ্রামে দেখা গেল তার পেটে জমজ বাচ্চা। যথারীতি সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে জন্ম হলো শিফা আর রিফার। কিন্তু একী! শিফা-রিফা তো বুকে পেটে মিলে মিশে একজন হয়ে আছে! এখন কী হবে? বুক-পেট জোড়া লাগানো থাকলেও তাদের আলাদা মাথা, আলাদা দুই হাত, দুই পা, পেশাব-পায়খানার রাস্তা এবং যোনিপথও আলাদা। বাবা- মা খাওয়ায়। দেখা দিল আরেক বিপত্তি, রিফা যতই খায়, শিফা তরতাজা হয়ে ওঠে, রিফা হাড্ডিসার।
খুঁজে খুঁজে তারা চলে এলো একজন প্রফেসর ডা. সাহনূর ইসলাম এর কাছে। যার যত্নের চিকিৎসায় এর আগেও পৃথক করা হয়েছে তোফা-তহুরা। বাংলাদেশী ডাক্তারগণ এ নিয়ে এ পর্যন্ত মোট ৭ জোড়া শিশুকে পৃথিকীকরণ করেছেন।
চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন সাহনূর ম্যাডাম। আর তার প্রমাণ তার যত্ন, ভালবাসা, আর দায়িত্ব নিয়ে কাজ করায়। এবার তার কর্মযজ্ঞের সারথি ৮২ জন ডাক্তার। তাদের মাঝে আছেন কার্ডিয়াক সার্জন, এনেস্থিসিওলজিস্ট, পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সাপেডিয়াট্রিক সার্জন, জেনারেল সার্জন, প্লাস্টিক সার্জন, হেপাটোবিলিয়ালি সার্জন, থোরাসিক সার্জন, ভাস্কুলার সার্জন, রেডিওলজিস্টসহ আরো অনেকেই! প্রায় ১০ ঘন্টার অপারেশন শেষে আলাদা করা হয় শিফা ও রিফার বুক-পেটের চামড়া, পোর্টাল শিরা, হৃদপিণ্ডের পর্দা, সাধারণ যকৃত নালী, এবং অন্ত্রের জোড়া লাগানো অংশগুলো।এরপর আইসিইউতে ভেন্টিলেটরে রাখা হয় তাদের। সেখান থেকে বের করার দুইদিনের মাঝেই কার্ডিয়াক এরেস্ট হয় শিফার। সেখান থেকে কার্ডিয়াক সার্জন ও এনেস্থিসিওলজিস্ট এর সহায়তায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এর সম্পূর্ণ খরচে সুস্থ হয় শিফা।
অবশেষে শিফা আর রিফা দুজন আলাদা মানুষ হিসেবে পৃথিবীর বুকে হেঁটে বেড়াবে এখন। নেপথ্যের কারিগর বাংলাদেশ এর চিকিৎসকগণ। কোন প্রকার বিদেশি ডাক্তারদের সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই নিজেদের পকেটের পয়সা খরচ করে, সময়, মেধা, আর ভালবাসা দিয়ে শিফা-রিফাকে সুস্থভাবে বাঁচার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আল্লাহর রহমতে।
শিফা- রিফার বাবা তাদের জন্য দোয়া চায়।
Discussion about this post