বিমানবন্দরে প্রবাসীদের ভিওআইপি সুবিধা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেহিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, বিমানবন্দরে যাওয়ার পর একজন কর্মী যে “অসহায় পরিস্থিতি” অনুভব করেন তা আগামী মাসের মধ্যে দূর করাই লক্ষ্য।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রবাসী কর্মীরা লাউঞ্জ ব্যবহার ব্যতীত বিমানবন্দরে একজন ভিআইপি যা পাবেন আমরা তাদের সবই দেব।
উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, যখন একজন ভিআইপি বিমানবন্দরে যান, তখন প্রায়ই তাদের লাগেজ বহন করার জন্য কেউ থাকে এবং চেক-ইন এবং ইমিগ্রেশন পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের সাথে থাকে। এই পরিষেবাগুলি প্রবাসী কর্মীদের দেওয়া হবে।
তিনি বলেন”প্রাথমিকভাবে, আমরা মধ্যপ্রাচ্যের কর্মীদের উপর ফোকাস করব। পরে, আমরা ইউরোপে কর্মীদের দিকে নজর দেব। মধ্যপ্রাচ্যে আসা-যাওয়া একজন কর্মী ভিআইপি ট্রিটমেন্ট পাবেন। আমরা পরে লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার কথা ভাবছি।” আগামী দুই সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে আমরা যেটা করবো, বিমানবন্দরে যাওয়ার পর একজন কর্মীর যে অসহায় অবস্থা তৈরি হয়, সেটি দূর করবো।
তিনি আরও বলেন, কর্মী কোন গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন, চেকইন কীভাবে করবেন, ফরম পূরণ করা লাগলে কীভাবে করবেন, ইমিগ্রেশনে কোনও কাগজ চাইলে কীভাবে সেটি করবেন, এসব কাজে নিয়োজিত থাকবে বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক। প্রয়োজনে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ট্রেনিং দিয়ে নতুন লোক নিয়োগ করবো। আমরা এটি দুই সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করবো। একজন প্রবাসী যেন কোনও অবস্থাতেই এয়ারপোর্টে হয়রানির শিকার না হন, অপমানিত বোধ না করেন, এ ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স থাকবে। আমরা অবশ্যই এটি নিশ্চিত করে ছাড়বো।
ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে বিদেশে মিছিল করতে গিয়ে যে প্রবাসী কারাভোগ করে দেশে ফিরেছেন তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল| তিনি বলেন, তাদের যদি অন্য কোনো দেশে পাঠাতে হয় সে ব্যবস্থাও করা হবে। প্রয়োজনে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কাজের ব্যবস্থা করা হবে। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য দায়বদ্ধতা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের টাকা ফেরতের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, ১৭ হাজার কর্মীর মধ্যে ২৫ শতাংশ টাকা ফেরত পেয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। শতভাগ কর্মীর টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে চক্র গঠন নিয়ে তিনি বলেন, চক্র যেন ভেঙে যায়, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। দুর্নীতির তদন্ত করা হবে।
প্রবাসী আয় বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান আসিফ নজরুল। এতে বলা হয়, প্রবাসীরা এখন থেকে সরাসরি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) পাঠিয়ে তাঁদের ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারবেন। এ সুযোগ এত দিন ছিল না। এতে প্রবাসী আয় বাড়বে। প্রবাসীদের ঋণসহায়তা দিতে ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক রাজি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রেডিট গ্যারান্টি দিলেই এটি চালু হবে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়, যেখানে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখা নেই, সেখানে সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকের শাখায় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের বুথ চালু করা হবে। এক কোটি টাকা পর্যন্ত ওয়েজ আর্নার্স বন্ড কেনার সীমাবদ্ধতা তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রবাসীরা যেকোনো পরিমাণ বন্ড কিনতে পারবেন। এতেও প্রবাসী আয় বাড়বে।
এদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সৃষ্ট জট খুলতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রভাব কাজে লাগানো হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে শ্রমবাজার সম্প্রসারণের নতুন খবর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা।
আসিফ নজরুল জানান, প্রবাসীদের ভোগান্তি কমিয়ে সেবা বাড়ানোর জন্য কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও শ্রম উইং নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ আছে। এখন থেকে এটা কঠোর নজরদারির মধ্যে আনা হবে। প্রবাসীদের অভিযোগ ও তার বিপরীতে ব্যবস্থা নেওয়ার চিত্র নিয়মিত প্রতিবেদন আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। কাজ না করলে দায়িত্ব পরিবর্তন করা হবে। দূতাবাস ঠিকমতো কাজ করলে অনেক অনিয়ম দূর করা সম্ভব হবে।
অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রিক্রুটিং এজেন্সিকে ক্যাটাগরি সনদ দেওয়ার কথা জানান আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, এতে এজেন্সির মান সম্পর্কে সবাই জানতে পারবে। এছাড়া অভিবাসন খরচ বাড়াতে দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ভূমিকা রাখে। তাই দালালদের নিবন্ধন করা হবে।
Discussion about this post