প্রবাসে মারা যাওয়া বা দুর্ঘটনায় শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী বাংলাদেশিরা যে ক্ষতিপূরণ পাবেন, তা বৈধ পথে দেশে আনলে তার বিপরীতেও প্রণোদনা সুবিধা দেওয়া হবে। দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, বিদেশে কর্মরত অবস্থায় মারা যাওয়া বা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠান বা বিমা কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ বৈধ পথে দেশে এলে তার বিপরীতে বিদ্যমান হারে প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ বাবদ বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থের আয়ের উৎস নিশ্চিত হতে হবে। সেই সঙ্গে বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থ বৈধ পথে দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে টাকায় রূপান্তর করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরো জানিয়েছে যে নতুন এই সিদ্ধান্ত নির্দেশনা জারির পর থেকে কার্যকর হবে। অর্থাৎ নতুন এই সিদ্ধান্তের আগে প্রবাসে মারা যাওয়া বা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী বাংলাদেশিরা ক্ষতিপূরণ বাবদ যে অর্থ পেয়েছেন, তাঁরা প্রণোদনার এই সুবিধা পাবেন না।
বর্তমানে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়। সরকারের প্রণোদনার পাশাপাশি আগে ব্যাংকগুলোও বাড়তি প্রণোদনা দিত। তবে এখন সরকারি প্রণোদনার বাইরে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ে বাড়তি কোনো প্রণোদনা দেয় না।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর দেশে প্রবাসী আয় আসা আগের চেয়ে বেড়েছে। গত আগস্ট মাসে ২২২ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাসে যার পরিমাণ ছিল ১৯১ কোটি ডলার। সে হিসাবে জুলাইয়ের চেয়ে আগস্টে প্রবাসী আয়ে প্রায় সোয়া ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
২০১৯ সালের ১ জুলাই সরকার প্রথম প্রবাসী আয়ের বিপরীতে ২ শতাংশ প্রণোদনা বা নগদ সহায়তার ঘোষণা দেয়। এই সিদ্ধান্তের কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠানোর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮২০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। পরে ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রণোদনার পরিমাণ ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে ১৮ হাজার ১৬৬টি মরদেহ এসেছে দেশে। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা, কর্মস্থলে দুর্ঘটনা, আগুনে পোড়া, ভবন থেকে পড়ে যাওয়া ও বৈদ্যুতিক শকে মারা গেছেন ৩ হাজার ৬৯৮ প্রবাসী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন সড়ক দুর্ঘটনায়, ২ হাজার ৬৪৯ জন। কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার সময় এসব দুর্ঘটনা ঘটে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কল্যাণ বোর্ডের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মরদেহ এসেছে ৩ হাজার ৬৯১টি। আর শেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসেছে ৪ হাজার ১০৭টি।
দেশে আসা প্রবাসীদের প্রতিটি মরদেহ দাফনে ৩৫ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেয় কল্যাণ বোর্ড। এর বাইরে জীবনবিমার সুবিধা পায় কর্মীর পরিবার। আর বিদেশে কোনো ক্ষতিপূরণের দাবি থাকলে তা দূতাবাসের মাধ্যমে আদায় করে দেওয়া হয়। মৃত কর্মীর বকেয়া থাকলে তা-ও আদায়ের উদ্যোগ নেয় দূতাবাস।
Discussion about this post