আমের রাজধানী খ্যাত চাপাইনবয়াবগঞ্জে এবার চাষ হচ্ছে সৌদি আরবের বিখ্যাত সব খেজুর। ইউটিউব দেখে সৌদি আরবের খেজুর চাষে সাফল্য পেয়েছেন মোশারফ হোসেন (৩৫)। ২০১৯ সালে ১৩৫০টি গাছ দিয়ে বাগান শুরু করেন তিনি। প্রথমে পরিবার ও এলাকাবাসী উপহাস করলেও গত চার বছর ধরে মোশারফের খেজুরের ফলন দেখে হতবাক তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাগানজুড়ে সারি সারি খেজুরগাছ। প্রতিটি গাছে ছড়িয়ে থাকা এক থেকে দেড় ফুট লম্বা পাতার কারণে দূর থেকে মনে হয় ঝাউবন। কাছে গেলে দেখা যায়, প্রতিটি গাছেই সেই পাতার আড়ালে থোকায় থোকায় ধরেছে খেজুর। সৌদি খেজুরের এ বাগান চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা দায়পুকুরিয়া ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে। বাগানে অন্তত ১১ জাতের খেজুরগাছ আছে। এছাড়া খেজুর চাষের পাশাপাশি খেজুর চারার নার্সারিও গড়ে তুলেছেন তিনি। যার নাম দিয়েছেন স্বপ্ন ছোঁয়া নার্সারি।
খেজুর চাষি মোশারফ হোসেন বলেন, প্রথমে ইউটিবে খেজুর চাষ দেখি। গাছে থোকায় থোকায় খেজুর দেখে মন আর ধরে রাখতে পারলাম না। তারপর বীজ সংগ্রহ করে বাগান করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। ২০১৯ সালে ১৩৫০টি গাছ দিয়ে শুরু করি। সেই বছর আমার বাগানে ৩১০টি গাছে খেজুরের ফলন আসে। বর্তমানে আমার বাগানে ১৫০টি গাছে থোকায় থোকায় খেজুর ঝুলছে।
খেজুর চাষি মোশারফ হোসেন জানান, খেজুরগুলো কুরিয়ারের মাধ্যমে সারাদেশে বিক্রি করেন তিনি। আবার কেউ বাগানে এসে পছন্দ মতো খেজুর নিয়ে যান। বেশিরভাগ খেজুরই বাগান থেকে বিক্রি হয়। সৌদি আরবের চাষকৃত খেজুর এবং তার চাষকৃত খেজুরের মধ্যে স্বাদ ও মিষ্টতায় কোন তফাৎ নেই বলেও জানান তিনি।
খেজুর গাছের পরিচর্যা নিয়ে তিনি বলেন, খেজুর গাছের পরিচর্যা নিয়ে অনেকেই হতাশ। তবে এই খেজুর গাছের পরিচর্যা তেমন কিছু নয়। শীতের আগে ও পরে দুইবার জৈব সার প্রয়োগ করি এবং মাসে একবার গাছগুলোতে স্প্রে করে দেই। খেজুর গাছে তেমন পোকার আক্রমণ থাকে না। তবে গন্ডার পোকা নামে একটি পোকা আছে যা গাছের মূলে খেয়ে ফেলে। তখন গাছটি মারা যায়। তার আগে কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকার আক্রমণ রোধ করলে গাছটি বেঁচে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, মোশারফ হোসেন শখের বসে সৌদি আরবের মরিয়ম, আজুয়াসহ আরও জাতের খেজুর চাষ শুরু করেছিলেন। গত বছরেও তার গাছগুলোতে ভালো খেজুর এসেছিল এবং এই বছরেও তার প্রায় ১৫০ গাছে খেজুর এসেছে। চলতি বছরে ৭০০ থেকে ৮০০ কেজি খেজুর ফলনের সম্ভবনা রয়েছে তার গাছগুলো থেকে। এছাড়া খেজুর বাগান দেখার জন্য দর্শনার্থীরা তার বাগানে আসে এবং তার বাগান থেকেই খেজুর ক্রয় করে নিয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে পানির সমস্যা রয়েছে। আর খেজুর চাষে পানির পরিমাণ কম লাগে। তাই স্বল্প পানি লাগে এই ধরনের চাষাবাদ সম্প্রসারণ করলে লাভবান হওয়া যাবে। তাছাড়া আমরা প্রচুর পরিমাণে খেজুর আমদানি করি। দেশের খেজুরের চাহিদা কিছু অংশও যদি আমরা পূরন করতে পারি চাষাবাদের মাধ্যমে তাহলে আমাদের যে বৈদেশ্যিক মুদ্রা বাইরে চলে যায় সেটি আর যাবে না। এছাড়া আমাদের দেশে খেজুর উৎপাদন সফলভাবে করতে পারব। কারণ যে জাতগুলো সারাবিশ্বে পরিচিত সেই জাতগুলোই তিনি করতে সক্ষম হয়েছেন। আমরা আশা করব কৃষক ভাই মোশারফ হোসেনকে দেখে আরও উদ্যোক্তা উৎসাহী হবে এবং এই চাষকে সম্প্রসারণ করবে।
Discussion about this post