প্রবাসীদের অর্থে গঠিত ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অধীনেই কাজ করে প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক। এটি প্রবাসীদের বিভিন্ন কল্যাণে বিমানবন্দরে কাজ করে আসছে। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে জায়গা বরাদ্দ পাচ্ছে না বলে জানা গেছে প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক। নিউজ প্রথম আলো
গণমাধ্যমটির প্রকাশিক সংবাদে জানা যায়, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে ২৪ জুন চিঠি দিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক। বাংলাদেশ জনশক্তি, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো ওই চিঠির অনুলিপি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী অক্টোবরে নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনালে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চালু হতে পারে। বিমানবন্দরের দায়িত্ব পালনকারী সব পক্ষকে নিয়ে ১০ জুন একটি বৈঠক করেছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান। বৈঠকে বিভিন্ন দপ্তরের কার্যালয় বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের অবস্থান ও কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চান ডেস্কের দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক।
বৈঠকে বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে যেভাবে বিএমইটির বহির্গমন ছাড়পত্র যাচাই করা হচ্ছে, তৃতীয় টার্মিনালে সে সুযোগ থাকছে না। নতুন টার্মিনালে সবকিছু যাচাই হবে অনলাইন প্রক্রিয়ায় স্বয়ংক্রিয় কাঠামোর মধ্যে। এর জন্য অভিবাসন বিভাগের তথ্যভান্ডারের (ডেটাবেইস) সঙ্গে বিএমইটির তথ্যভান্ডার একীভূত করে অভিবাসনের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আর প্রবাসীদের কল্যাণসংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম তৃতীয় টার্মিনালের তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে পরিচালিত হবে বলে বৈঠকে জানান বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক।
জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারের বেশি নতুন কর্মী বিদেশে যান। পুরোনো কর্মীদের আসা-যাওয়া তো আছেই। বিদেশে যেতে প্রত্যেক কর্মীকে বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। তাঁদের একটি স্মার্টকার্ড দেওয়া হয়। কোনো কর্মী যাতে মানব পাচারের শিকার না হন, তাই বিমানবন্দরে ছাড়পত্রটি যাচাই করে প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক। এটি পুলিশের অভিবাসন বিভাগের কাছে চলে গেলে যাচাইয়ের এ সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
এছাড়াও প্রবাসীদের নানা রকম সহায়তা দেওয়া। প্রবাসী শ্রমিকদের বেশির ভাগের পড়াশোনা কম কিংবা নেই বললেই চলে। তাঁদের নানাভাবে সহায়তা করতে হয় বিমানবন্দরে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে ছুটিতে আসা কর্মীদের ফিরে যাওয়ার সময় ছুটির অনুমতিটা নিয়ে যেতে হয়। এটি তাঁরা প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক থেকে প্রিন্ট করে নেন। তাঁদের সব কাগজপত্র যাচাই করে গুছিয়ে দিতে সহায়তা করেন ডেস্কের কর্মীরা। অনেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। বিভিন্ন দেশ থেকে পুলিশের হাতে আটক হয়ে আউটপাস (ভ্রমণের বৈধ অনুমতিপত্র) নিয়ে ফেরেন কেউ কেউ। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়মিত প্রবাসীদের মরদেহ আসে। এটি গ্রহণ করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর ও দাফনের জন্য অনুদান প্রদানের কাজটি করে প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক। তাই এ ডেস্কের কার্যক্রম বন্ধ করা হলে প্রবাসীরা নানা রকম ভোগান্তির মধ্যে পড়বেন।
বেবিচকের সদস্য (পরিচালন ও পরিকল্পনা) এয়ার কমোডর এ এফ এম আতিকুজ্জামান গণমাধ্যমটিকে বলেন, প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক থেকে যা যা সেবা দেওয়া হয়, তা তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার কাঠামোর মধ্যে পরিকল্পনা করা আছে। এ ছাড়া টার্মিনালটি পরিচালনা করবে জাপানের একটি সংস্থা। তাই আলাদা করে জায়গা বরাদ্দ চাইলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, এটি তাদের দায়িত্বে আছে।
অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, তৃতীয় টার্মিনালে প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক না রাখাটা ভুল সিদ্ধান্ত। জাপানি সংস্থা এটি পরিচালনা করলেও তাদের আগেই প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের জন্য জায়গা রাখার কথা বলা উচিত ছিল। প্রবাসী যাত্রীদের দিয়েই উড়োজাহাজ ব্যবসা ও বিমানবন্দর চলে। তাই প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষাটা জরুরি। যত দ্রুত সম্ভব, তৃতীয় টার্মিনালে প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের জায়গা ঠিক করা উচিত।
Discussion about this post