দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে বিদেশি ঋণের প্রতি সরকারের ঝোঁক বেড়েছে। পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। একই সঙ্গে ক্রমেই বাড়ছে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ। ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশকে এখন তুলনামূলক বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। ফলে প্রতিবছর সরকার যে বিদেশি ঋণ নিচ্ছে, তার বেশিরভাগই সুদ-আসলসহ ঋণ পরিশোধেই ব্যয় হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে ২৮ হাজার ২৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৬ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে সুদ পরিশোধ।
আলোচ্য অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ঋণের বিপরীতে শুধু সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১১ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। আর ডলারের হিসাবে সুদ পরিশোধ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। মূলত টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আগের বছরগুলোতে নেওয়া ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। সম্প্রতি চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের (জুলাই- মার্চ) বৈদেশিক ঋণ সহায়তার তথ্য প্রকাশ করে ইআরডি। এতে দেখা যায়, প্রথম ৯ মাসে সরকার সুদ ও আসলসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে ২৫৭ কোটি ডলার। টাকার অংকে ২৮ হাজার ২৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
বছরের ব্যবধানে টাকার অংকে ঋণ পরিশোধ বাড়ার মূল কারণ ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের হার ছিল এক দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক লাফে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটে ২৬ দশমিক ১২ শতাংশ। এতে প্রতি ডলারের দর হয় ১০৮ টাকা ৮৪ পয়সা। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে এক দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। বর্তমানে প্রতি ডলারের দাম ১১০ টাকা। অর্থাৎ গত দেড় বছরে ২৭ শতাংশের বেশি টাকার অবমূল্যায়ন ঘটেছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সরকার যে ঋণ পরিশোধ করেছে তারমধ্যে আসল ঋণ ১৬ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বাকি ১১ হাজার ৬০১ কোটি কোটি ৮৩ লাখ টাকা সুদ বাবদ দিতে হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৬ হাজার ৯৬৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে আসল ছিল ১২ হাজার ২০২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের যেখানে ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা সুদ দিতে হয়েছিল, সেখানে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ।
এ সময়ে ডলারের হিসাবে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ২৫৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার, যা আগের বছরে ছিল ১৭৩ কোটি ৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৮৩ কোটি ডলার। এ সময় ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। আগের বছর ছিল ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ ডলারের হিসাবে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৫৭ কোটি ডলার।
জেআই/
Discussion about this post