বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপ বা টাকা ও ডলারের বিনিময় সুবিধা চালু করেছে। এর আওতায় বাণিজ্যিক ব্যাংক তার উদ্বৃত্ত ডলার বা অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকে রেখে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদে দুভাবেই টাকা নিতে পারবে। এতে তারল্যসংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর সাময়িক উপকার হবে বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইভাবে ডলার জমা দিয়ে ধার নেওয়া টাকা ফেরত দিয়েও আবারও ডলার বা অন্য যেকোনো অনুমোদিত বৈদেশিক মুদ্রা নেওয়া যাবে।
এ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক অদলবদলে স্পট রেট বা বিনিময় হার পাবে বাণিজ্যিক ব্যাংক।
অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদের জন্য ডলার জমা রেখে টাকা ধার নিলে তার ওপর নীতি সুদহার (পলিসি রেট) বা আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক রেট হিসেবে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) অনুযায়ী সুদ বা মুনাফা দিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। প্রাথমিকভাবে দীর্ঘমেয়াদি এ সুবিধার কথা বলা হয়েছে ৭ থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ (এফইপিডি) থেকে এ-সম্পর্কিত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অফশোর শাখায় বৈদেশিক মুদ্রা স্থানান্তরে বিধিনিষেধ আরোপ করার পর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ডলার ও অন্যান্য মুদ্রা অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। এই উদ্বৃত্ত বৈদেশিক মুদ্রার কারণে কিছু ব্যাংক নগদ টাকার সংকটে ভুগছে। এসব উদ্ধৃত ডলার জমা রেখে তারল্য সুবিধা দিতেই নতুন এ ব্যবস্থা। এর ফলে দুপক্ষই লাভবান হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংক পাবে তারল্য আর বাংলাদেশ ব্যাংক পাবে রিজার্ভ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তারল্যসংকট কেটে গেলে আবার নির্ধারিত সময় পর টাকা ফেরত দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ ডলার পেয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে নামমাত্র সুদ বা মুনাফা পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। সুদের হার হিসাবায়নে ডলারের ক্ষেত্রে বেঞ্চমার্ক রেট এসওএফআর ৫ দশমিক ৩ শতাংশ আর টাকার ক্ষেত্রে নীতি সুদহার ৮ শতাংশ হিসাব করতে হবে। এ হিসাবে টাকা ফেরত দিয়ে আবারও ডলার নিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নীতি সুদহার থেকে এসওএফআর বিয়োগ করে ২ দশমিক ৭ শতাংশ (বার্ষিক হারে) পরিশোধ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
এফইপিডির সার্কুলারে বলা হয়, এ ব্যবস্থার আওতায় সর্বনিম্ন ৫০ লাখ ডলার বা তার সমপরিমাণ টাকা বিনিময় বা অদলবদল করা যাবে। এর মেয়াদ হবে সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিন। মুদ্রা অদলবদলের এ সুবিধা নিতে হলে আগ্রহী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুক্তি হবে। সেই চুক্তি অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেদিন বাংলাদেশ ব্যাংকে ডলার জমা দেবে, ওই দিনের ডলারের বিনিময় মূল্য হিসেবে সমপরিমাণ টাকা পেয়ে যাবে। একইভাবে নির্ধারিত সময় পর টাকা জমা দিয়ে ডলার ফেরত নিতে পারবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ব্যবস্থার ফলে সুবিধা হবে উভয় পক্ষের। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ ব্যাংকগুলোর সাধারণ ব্যাংকিং থেকে অফশোর ইউনিটে ডলার স্থানান্তর বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া মূল ব্যাংক থেকে অফশোর ইউনিটে যে অর্থ দেওয়া হয়েছে, তাও চলতি বছরের মধ্যে ফেরত আনতে বলা হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো ব্যবসার জন্য বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে যে ডলার ধার এনেছে, তা ব্যবহার করতে পারছে না। তাই ডলার উদ্বৃত্ত হয়ে পড়েছে।
নতুন এ ব্যবস্থায় বাণিজ্যিক ব্যাংক চাহিদামাত্র ডলার ফেরত পাবে। এতে আমদানি বাণিজ্যে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না।
এত দিন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমদানি ঋণপত্র খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চাইলেও সব সময় পেত না। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করত। নতুন ব্যবস্থায় চুক্তির আওতায় বাধ্যবাধকতা তৈরি হলো। এতে ব্যাংকগুলোর প্রয়োজনে ডলার পাওয়ার নিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
জেআই/
Discussion about this post