মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশি-বিদেশি কারাবন্দীদের মুক্তি দিচ্ছে দেশটির আদালত।
জানা যায়, ১১৪ জন বিদেশি নাগরিকসহ মোট ৯ হাজার ৬৫২ জনকে মুক্তির ঘোষণা দেয়া হয়। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে এই তথ্য।
জানা গোছে, ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পায় মিয়ানমার। তারপর থেকে এই দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে দেশটি।
ক্ষমতাসীন জান্তার এক মুখপাত্র গ্লোবাল নিউ লাইটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মানবিক বিবেচনায় প্রতি বছরই কারাবন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়। এবারই প্রথম ১১৪ জন বিদেশিসহ ৯ হাজার ৬ শ’জনের বেশি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিগগিরই তারা কারামুক্ত হয়ে স্বজনদের কাছে ফিরে যেতে পারবেন।’
জান্তার ওই মুখপাত্র বলেন, বিভিন্ন কারাগার থেকে মুক্তি পর এই বন্দিদের প্রথমে মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের ইনসেইন কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে। বন্দিদের স্বজনদেরও সেই কারাগারে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় পেয়ে সরকার গঠন করেছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। কিন্তু সেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। দেশটির তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং সেই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন
ক্ষমতা দখলের পর বন্দি করা হয় এনএলডির শীর্ষ নেত্রী অং সান সু চিসহ দলটির অধিকাংশ উচ্চ ও ও মাঝারি পর্যায়ের নেতা ও আইনপ্রণেতাদের। এখনও তারা কারাগারে রয়েছেন।
মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী জনগণ অবশ্য সামরিক বাহিনীর এ পদক্ষেপ একেবারেই মেনে নেয়নি। বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই রাজধানী নেইপিদো, প্রধান শহর ও বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনসহ দেশটির ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের শুরুর দিকে শান্তিপূর্ণভাবে তা দমনের চেষ্টা করলেও একসময় বিক্ষোভ দমন করতে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয় জান্তা।
নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে হাজারেরও অধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এক পর্যায়ে গণতন্ত্রপন্থীরা জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দিতে থাকেন, গঠিত হয় ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট বা নাগ।
মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে নাগ যোদ্ধাদের সঙ্গে তীব্র লড়াই চলছে সেনা ও পুলিশ বাহিনীর।
রয়টার্স
জেআই/
Discussion about this post