শামসুন নাহার সুমি, আমিরাত প্রবাসী: দেশে থাকা স্বজনরা ভাবে প্রবাস জীবন খুব আরামের। তারা জানে না, এখানে চাইলেও কাজের লোক পাওয়া যাবে না। কাজের লোক রাখার সামর্থ্য থাকে শুধু মিলিওনিয়ারদের। এদেশে কল নষ্ট হলেই প্লাম্বার ডাকার বিলাসিতা করা যায় না। ঘরের রঙ করতে রঙ মিস্ত্রী আনা যায় না। অনেক সময় সব কিছু নিজে হাতেই করতে হয়।
দেশে থাকা মায়েরা বাচ্চার জন্মের আগ হতে মা বা বোন, শ্বাশুড়ি বা ননদ, খালা বা ফুফুর সহযোগিতা পায়, আর তা চলতে থাকে বাচ্চা বড় হওয়া পর্যন্ত। অথচ এদেশে একজন মাকে সব কিছু একা হাতে করতে হয়। ডেলিভারির দিন পর্যন্ত সে কাজ করে, হসপিটাল হতে এসেও কাজ করে। স্বামী ছাড়া আর কেউ নেই সাহায্য করার।
ডে-কেয়ার ব্যবস্থা যতই উন্নত হোক, তারা সব কিছু করে দেয় না। জন্মের পর হতে বাচ্চার সমস্ত দায়িত্ব মায়ের ই। প্রবাসীদের বাচ্চারাও জ্বালায়। কিন্তু সেই জ্বালানোতে অতিষ্ঠ হয়ে মা পেটায় না বাচ্চা, যেমনটা হরহামেশাই পিটিয়ে থাকে দেশে থাকা মায়েরা।ঘরে ওয়াশিং মেশিন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ওভেন আছে মানেই মায়ের সব কাজ নেই হয়ে যায় না। কাজগুলো হয়তো সুশৃংখল ভাবে হয়, কিন্তু কাজ কমে যায় না।
বিলাসী জীবনযাপন চাইলেও সম্ভব নয় এদেশে। উপার্জনের পাশাপাশি সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়। তাই খুব ভেবেচিন্তেই খরচ করতে হয়, টাকার পাহাড়ে বসে থাকি না আমরা। এছাড়া সবাইকে ছেড়ে থাকার জন্য মানসিক পিছুটান তো সর্বদাই থাকে।
এত কিছুর পরও কেন প্রবাসী হয়! কেন দেশে পড়ে থাকেনা! একটু ভালো জীবনের জন্য, নিজের সন্তানদের একটা ভালো জীবন দিতে, ভালো শিক্ষার অধিকার দিতে, নিরাপত্তা দিতে, অসহনীয় ট্রাফিক জ্যাম হতে মুক্তি দিতে, একটা ভালো পরিবেশ দিতে, একটা সভ্য সমাজে অন্যের পরচর্চা হতে দূরে রাখতে, অন্যের ব্যাপারে নাক গলানো মানুষগুলোর হাত হতে বাঁচতে মানুষ প্রবাসী হয়।
প্রবাসীদের দোষের শেষ নেই।
তারা তো আরামেই থাকে, টাকার লোভে বিদেশে পড়ে থাকে, দেশের ব্যাপারে তাদের কথা বলার অধিকার নেই, দেশের প্রতি মায়া নেই, ইত্যাদি ইত্যাদি। কথাগুলো যারা বলে, তারাই আবার তক্কে তক্কে থাকে, সুযোগ খোঁজে, কিভাবে দেশের বাহিরে যাওয়া যায়। কি নির্লজ্জ দ্বিচারিতা!
হ্যা আমরা আরামেই থাকি, আনন্দেই থাকি। নিজেকে আরাম নিজেরই দিতে হয়,আনন্দটাও নিজেরই খুঁজে বের করতে হয়। আমাদের কষ্টগুলো ফুল হয়েই ফোটে।
Discussion about this post