আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি বলেছেন, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি নাগাদ বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং সংশোধিত এ শ্রম আইন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতেও প্রযোজ্য হবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির ৩৪৬তম অধিবেশনে অংশ নিয়ে মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি। গত ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ অধিবেশনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইনমন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন এবং বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন দু’টির মধ্যে কোনোটি নতুন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে প্রয়োগ হবে; তা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি ঘোষণা করেন, সংশোধিত বাংলাদেশ শ্রম আইনই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে প্রয়োগ হবে।
আনিসুল হক বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রগুলো কঠিন সময় অতিক্রম করছে। বিশ্বের বিভিন্ন অংশে রাজনৈতিক সংকটের কারণে এটি আরো প্রকট হয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এই ধরনের দুর্দশার মধ্যে; বাংলাদেশ আইএলও কনস্টিটিউশনের ২৬ অনুচ্ছেদের অধীনে উত্থাপিত অভিযোগগুলো নিষ্পত্তির জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। গত মার্চ মাসে আইএলও’র গভর্নিং বডির সভায় প্রতিবেদন দাখিল করার পর প্রায় সাত মাসে বাংলাদেশ সরকার রোডম্যাপ বাস্তবায়নে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি সাধন করেছে। সরকার দেশের সামগ্রিক শ্রম পরিস্থিতি সুষমভাবে উন্নতি করতে রোডম্যাপের চারটি ক্লাস্টারে অগ্রগতি সুরক্ষিত করার চেষ্টা করেছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারীর সময় লকডাউন; কর্মঘন্টা সংক্ষিপ্তকরণসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শ্রম অধিকার বিষয়ক আইনি সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ সরকার অবিচল ছিল। সরকার ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা সংশোধন করেছে এবং বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। এই প্রক্রিয়ায় আইএলও বিশেষজ্ঞ কমিটির পর্যবেক্ষণকে যথাযথ বিবেচনা করা হয়েছে।
আইএলওকে আশ্বস্ত করে আইনমন্ত্রী বলেন, আইনি সংস্কারের পরবর্তী ধাপ হিসেবে শ্রম আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এবিষয়ে এখন পর্যন্ত ১৭টি স্টেকহোল্ডারের কাছ থেকে সংশোধনী প্রস্তাব পাওয়া গেছে। ত্রিপক্ষীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ গুরুত্ব সহকারে এ সংশোধনী প্রস্তাবগুলো সংকোলনের কাজ করছে।
তিনি জানান, ত্রিপক্ষীয় শ্রম আইন পর্যালোচনা কমিটি সংকলিত সুপারিশ/প্রস্তাবগুলোর ওপর আরো আলোচনা-পর্যালোচনা করবে এবং জাতীয় ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ কাউন্সিলের অনুমোদন চাইবে।
তিনি বলেন, আশা করি, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি নাগাদ বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং সংশোধিত এ শ্রম আইন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলেও প্রযোজ্য হবে।
ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, অধিকতর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়াটিকে পুরোপুরি ডিজিটাইজড করা হয়েছে। শ্রম অধিদফতর তার চারটি শিল্প সম্পর্কিত ইনস্টিটিউট এবং ৩২টি শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের সহায়তায় শ্রমিক ও নিয়োগকর্তাদের ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সহায়তা করার জন্য শ্রম অধিদফতরে একটি প্রি-অ্যাপলিকেশন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। প্রয়োজনে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরো সহজ করা হবে।
রোডম্যাপের সাথে সামঞ্জস্য রেখে শ্রম পরিদর্শন এবং প্রয়োগকে শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, শ্রমখাতে গুণগত পরিবর্তন আনতে দেশি-বিদেশি সামাজিক অংশীদার এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গভর্নিং বডির ৩৪৪ তম অধিবেশনে আইএলও’র মহাপরিচালকের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আইএলও কনভেনশন ১৩৮ অনুসমর্থনের দলিল হস্তান্তর করার কথা উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতেও বাংলাদেশ সরকার ‘জবরদস্তি শ্রম সম্পর্কিত আইএলও কনভেনশন, ১৯৩০ এর প্রটোকল ২৯ অনুসমর্থন করেছে। স্পষ্টতই, এগুলো আইএলও শ্রম মানদণ্ডের প্রতি আমাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রদর্শন।
প্রতিনিধি দলে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: এহছানে এলাহী, সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও জেনেভায় জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো: সুফিউর রহমান এবং অতিরিক্ত শ্রম সচিব জেবুন্নেছা করিমসহ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
সূত্র : বাসস
Discussion about this post