মতিউর রহমান মুন্না: মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের শিকার রুনা আক্তার নামের এক বাংলাদেশি নারীর মরদেহ প্রায় দেড় মাস ধরে এথেন্সের একটি হাসপাতালের মর্গে পড়ে রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ না করায় লাশটি দেশে পাঠানোর উদ্যোগও নিচ্ছে না কেউ। এদিকে মর্গের ফ্রিজের ভাড়াও দিনদিন বেড়ে চলেছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রশাসনিক জটিলতা ও পরিচয় শনাক্ত না হওযায় প্রাথমিকভাবে মরদেহটি দেশে পাঠানোর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসও।
এরই মধ্যে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও রুনা বেগমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। লাশ দেশে পাঠানোর পক্রিয়ার প্রথম ধাপে পরিবারের আবেদন প্রয়োজন। এমনকি প্রায় লক্ষাধিক টাকাও খরচ বহন করতে হয়।
জানা গেছে, গত ২৮ আগস্ট রাজধানী এথেন্সের কিপসেলির তেনেদু স্ট্রিটে রুনা আক্তার (৩৬) নামের এক বাংলাদেশি নারীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৪০ বছর বয়সী এক বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রুনা বেগম নারায়নগঞ্জের জনৈক রিপন মিয়ার স্ত্রী। তবে গ্রেফতার ব্যক্তির নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে গ্রিসের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়েছে। এতে বলা হয়, কিপসেলির একটি রাস্তায় বাংলাদেশের একজন ৩৬ বছর বয়সী নারীকে ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম অবস্থায় পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সেখানেই কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়।
নিহত রুনা আক্তারের স্বামী এবং পুলিশের তদন্ত থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, ৪০ বছর বয়সী বাংলাদেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি ওই নারীকে রাস্তার মাঝখানে বারবার ছুরিকাঘাত করে হত্যার কথা স্বীকার করেছে পুলিশের কাছে।
হত্যাকারী ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছে, তারা দুজন এথেন্সের একটি ক্লিনিং কোম্পানিতে এক সঙ্গে কাজ করতেন। এক পর্যায়ে তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ওই নারীর স্বামী দীর্ঘদিন বেকার ছিলেন। সে সময় তার কাছ থেকে গত কয়েক মাসে ২০ হাজার ইউরো ধার নিয়েছিল ওই দম্পতি।
হামলাকারী আরও দাবি করেন, স্বামীর সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন রুনা আক্তার। তবে শেষ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি রাখেননি রুনা। তাদের সম্পর্ক এগোতে না দেখে গত রোববার শেষবারের মতো দেখা করতে চান শান্ত। এর আগেই ঘাতক শান্ত এথেন্সের ওমোনিয়ার একটি দোকান থেকে একটি ছুরি কিনেছিলেন যা রুনার সঙ্গে দেখা করার সময় তার কাছে লুকিয়ে রেখেছিলেন। ওইদিন বিকেলে রুনার বাসার নিচে গিয়ে জরুরি কথা বলার জন্য তাকে রাস্তায় নেমে আসতে বলেন।
গ্রেফতার শান্ত পুলিশকে জানায়, তার ডাকে রুনা নিচে আসলে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় সে তার স্বামীকে তালাক দিতে চায় কিনা। এ সময় রুনা তাকে তাদের জীবন থেকে সরে যেতে বলেছিল, তখন শান্ত তার পাওনা টাকা ফেরত চাইলে তা অস্বীকার করে রুনা। এতে ভীষণ রেগে গিয়ে ছুরিকাঘাত করে খুন করে।
এদিকে, এখনো লাশটি পড়ে আছে হাসপাতালের মর্গে। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকেও কেউ কোনো যোগাযোগ করেনি মরদেহটি দেশে পাঠানোর জন্য। এ অবস্থায় বেড়েই চলছে হাসপালাতের ফ্রিজের ভাড়া। লাশটি গ্রিসে দাফন করতে হলেও হাসাপাতালের ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। এ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস।
Discussion about this post