মঙ্গলে ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব নিয়ে নাসার একটি ছবি প্রকাশের পর নানা প্রশ্ন ওঠেছে। মহাবিশ্বে ‘এলিয়েন’ বা বহির্জাগতিক প্রাণের অস্তিত্ব নিয়েও নানা জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় রহস্যময় সংকেত পাওয়ার দাবিও করছেন বিজ্ঞানীরা। কেউ কেউ ধারণা করছেন পৃথিবীকে হামলা করতে পারে এলিয়েন! স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব ভিগোর পিএইচডির শিক্ষার্থী আলবার্টো ক্যাবেলারো দাবি করেছেন মিল্কিওয়েতে অর্থাৎ যে ছায়াপথে পৃথিবী অবস্থিত, তাতে চারটি ‘হিংসুটে’ বহির্জাগতিক সভ্যতার বসতি আছে। অত্যন্ত ‘বিদ্বেষপরায়ণ’ এই এলিয়েনরা কোনো কারণে ক্ষেপে গেলে পৃথিবীর উপর আক্রমণ করতে পারে। নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে মানুষসহ সব প্রাণের অস্তিত্ব। তার দাবি, এই হামলা হতে পারে প্রতি ১০ কোটি বছরে একবার। তবে এই নিয়ে কেউ এখনো কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। এলিয়েনের অস্তিত্ব পাওয়া না পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও কোনো ধরণের প্রশ্ন নেই, নতুন পৃথিবীর চ্যালেঞ্জ নিতে হবে আমাদের। দিন যত এগুচ্ছে, সভ্যতা বিমুখ হয়ে ওঠছে মানুষের। প্রাণ-প্রকৃতি মানুষের সৃষ্ট অত্যাচারে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। রীতিমত বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে আমাদের। বেঁচে থাকতে হলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেই হবে। প্রাণ-প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে নিতে হবে নতুন পৃথিবীর চ্যালেঞ্জ।
‘নতুন পৃথিবী’ শব্দটি গত কয়েকবছরে নতুন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারি করোনার ধকল কেটে ওঠতে গিয়ে এই শব্দের প্রত্যাবর্তন। অদৃশ্য এক ভাইরাস আমাদের ভিন্ন আঙ্গিকে বেঁচে থাকার দীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। মানুষে মানুষের শারীরিক দূরত্ব বাড়লেও কমেছে মৃত্যুর দূরত্ব। মৃত্যুকে খুব কাছাকাছি থেকে অনুভব করার সুযোগ এনে দিয়েছে করোনা। স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সচেতনতা সহ বেঁচে থাকার তাগাদায় তাই নিজ নিজ নিরাপত্তা নিয়ে আমি, আপনি ব্যস্ত ছিলাম। এখনও আছি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস পুরোপুরি শেষ হবার নয়। টিকা নিলে ভাইরাসের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে মাত্র। আক্রান্তের সংখ্যা কমবে। কিন্তু দেশে দেশে এখনো করোনার ওঠানামা দেখে সহজে অনুমেয় খুব সহজে কভিড-১৯ পৃথিবী ছাড়ছে না। আবার এর পেছন পেছন এসে হাজির হয়েছে করোনার আরো কিছু ধরন। ডেল্টা, ওমিক্রন। নতুন করে মাঙ্কিপক্স নামে আরো এক ভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে ইদানিং। যা মানুষের শরীরে নতুন করে বাসা বাঁধছে। আক্রান্ত করছে। ভয় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দেশে দেশে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে আমাদের। এই চ্যালেঞ্জ খুব সর্তকতার সঙ্গেই মোকাবিলা করতে হবে আমাদের। থাকতে হবে নিজেদের সর্বোচ্চ সচেতন।
লক্ষ্য করলে দেখবেন- করোনা ভাইরাসের কারণে সমগ্র পৃথিবী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ১০ জুন ২০২২ পর্যন্ত সারাবিশ্বে প্রায় ৬.৩১ মিলিয়ন মানুষ করোনায় মারা গেছে। শুধু বাংলাদেশে মারা গেছে ২৯ হাজার ১৩১ জন। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় কিংবা লকডাউন থাকায় অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে গেছে অনেকগুলো দেশ। পিছিয়ে যাবার তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। নতুন করে শুরু করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সবাইকে। অর্থনীতির জন্য এটি অনেকবড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক বিষয় টানতে গিয়ে বলতে হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা। রপ্তানিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখা এই দুটো দেশের মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে সমগ্রবিশে^। যে কারণে বাড়ছে জ¦ালানি তেল, আমদানী নির্ভর পণ্যের দাম। কমছে টাকার মান। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে জীবনযাপনের উপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যত দিন যাচ্ছে ততই কঠিন হয়ে ওঠছে অর্থনীতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা। সবাই কমবেশি বুঝতে পারছি- বেঁচে থাকতে হলে অর্থনীতির এই চ্যালেঞ্জ আমাদের মুখোমুখি এসে দাঁড়াবেই। যা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। ব্যাপকভাবে কৃষি উৎপাদনে মনোনিবেশ করতে হবে।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে র বিএম কন্টেইনার ডিপোর অগ্নিকাণ্ড ঘিরে কয়েকটি বিষয় নজরে পড়েছে। তারমধ্যে খুব সাধারণ একটি বিষয় নিয়ে কথা বলি। মূলত এটি সচেতনতার দায় প্রসঙ্গ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের যতটুকু সচেতন করছে ততটুকু ঝুঁকিতেও নিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্য করে দেখবেন- একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল তাদের একটি রিপোর্টে দেখালো বিস্ফোরণের কয়েক মিনিট আগেও ওই জায়গাটিতে প্রায় অর্ধশত মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদের অনেকে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছেন, কেউ কেউ লাইভ করছেন ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অথচ তখন তাদের সবচে জরুরি ছিল নিজেদের সুরক্ষা, সচেতনতা। ভেবেছেন, এই দিকটিতে আমরা কতটুকু পিছিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কি আদৌ সচেতনতার দায় নেই ? অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় প্রায় অর্ধশত মানুষ মারা গেলেন। আহত হলেন আরো অনেকে। আপনার কি মনে হয়, অগ্নিকা- ঘটার পর তাদের সুরক্ষিত জায়গায় সরে যাওয়া উচিত ছিল না ? নিশ্চয়ই ছিল। সঙ্গত কারণে যদি খুব দূরে যাবার সুযোগ নাও থাকে অন্তত দুর্ঘটনার জায়গাটি থেকে তারা দূরত্বে থাকতে পারত। আমি তাদের দায়ী করছি না, শুধু দায়টা ধরে দিচ্ছি। যেখানে সচেতনতার বড্ড অভাব বোধ হয়েছে। মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের প্রচার প্রসার বাড়াতে আমরা অতিমাত্রায় দায় সারা হয়ে ওঠছি। উদাহরণ টানলে এমন অসংখ্য বিষয় সামনে এসে যাবে। কথা দীর্ঘ না করার সূত্রে শুধু এতটুকুই বলবো- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার যেন আমাদের মাত্রাতিরিক্ত অসচেতন করে না তোলে। নতুবা এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই আমাদের সামাজিকভাবে বসবাস করতে গেলে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে সামনে এসে দাঁড়াবে।
কামরুল হাসান জনি
দুবাই ; ১৬ জুন ২০২২ ইং
Discussion about this post