ভারতে যেভাবে কাশ্মীরের নির্বাচনকেন্দ্রের সীমানার পুনর্বিন্যাস বা ডিলিমিটেশন করা হচ্ছে, তাতে এলাকার জনসংখ্যার চরিত্র বদলে যাচ্ছে। কাশ্মীরিদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এই প্রয়াস জাতিসংঘের প্রস্তাব, আন্তর্জাতিক আইন ও চতুর্থ জেনিভা কনভেনশনেরও বিরোধী। সোমবার এ মন্তব্য করেছে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন(ওআইসি)।
টুইটে ওআইসি-র জেনারেল সেক্রেটারিয়েট জানিয়েছে, ভারত বেআইনিভাবে জম্মু ও কাশ্মীর দখল করে রেখেছে। ভারত এর তীব্র বিরোধিতা করে জানিয়েছে, ওআইসি সাম্প্রদায়িক কর্মসূচি নিয়ে চলছে এবং অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করছে। ওআইসি-র জেনারেল সেক্রেটারিয়েটের কাউন্সিল অফ ফরেন মিনিস্টারস জানিয়েছে, তারা জম্মু ও কাশ্মীর বিরোধের দীর্ঘমেয়াদী ও নীতিগত অবস্থানে অনড় থাকছে।
ওআইসি কাশ্মীরের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবি সমর্থন করে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদও তাই চেয়েছিল। তাই ওআইসি আন্তর্জাতিক দুনিয়া, বিশেষ করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদকে অনুরোধ করছে, তারা যেন অবিলম্বে ডিলিমিটেশনের প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি দেখে। এর আগে ওআইসি-র মানবাধিকার কমিশন ডিলিমিটেশনের তীব্র নিন্দা করেছিল। তাদের মত হলো, ভারতের এই প্রয়াস, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন ছাড়া আর কিছুই নয়।
ভারতের বরাবরের অবস্থান হলো, জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ফলে কাশ্মীরে ভারত যে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ওআইসি-র মন্তব্যের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানিয়েছেন, ”অতীতের মতোই ভারত ওআইসি-র দাবি পুরোপুরি খারিজ করে দিচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং তা ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।” পাকিস্তানের নাম না করে অরিন্দম বলেছেন, ”অন্য কোনো দেশের প্ররোচনায় ভারতের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক কর্মসূচি নেয়া থেকে যেন বিরত থাকে ওআইসি।”
এই মাসের গোড়ায় জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচন কেন্দ্রের সীমানার পুনর্বিন্যাস নিয়ে খসড়া রিপোর্ট দিয়েছে ডিলিমিটেশন কমিশন। ডিলিমিটেশনের কাজ শেষ হলেই জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন হবে বলে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর ডিলিমিটেশন কমিশনের প্রধান হলেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি রঞ্জনা প্রকাশ দেশাই। রিপোর্টে সাতটি নতুন আসন তৈরির কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি জম্মুতে ও একটি কাশ্মীরে। সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, রিপোর্টে কাশ্মীরের অনন্তনাগ সংসদীয় কেন্দ্রের সঙ্গে জম্মুর রাজৌরি ও পুঞ্চ ঢুকিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
কাশ্মীরের শ্রীনগর জেলায় খানিয়ার, সোনোয়ার ও হজরতবাল ছাড়া অন্য সব বিধানসভা আসনের পুনর্বিান্যাস করার কথা বলা হয়েছে। শ্রীনগর দক্ষিণ ও চান্নাপোরা কেন্দ্রের কিছু অংশ নিয়ে একটি নতুন কেন্দ্রের প্রস্তাব করা হয়েছে। এভাবেই প্রতিটি জেলাতে বিধানসভা ও লোকসভা কেন্দ্রের ব্যাপক বদলের কথা বলা হয়েছে। এই রিপোর্ট পাঁচজন অ্যসোসিয়েট সদস্য ফারুক আবদুল্লা, হাসনাইন মাসুদি, আকবর লোন, জিতেন্দ্র সিং ও যুগল কিশোরের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ন্যাশনাল কনফারেন্স এর আগেই ডিলিমিটেশন কমিশনের খসড়া রিপোর্টের বিরোধিতা করে জানিয়েছিল, জম্মুতে কোন যুক্তিতে সাতটি ও কাশ্মীরে মাত্র একটি আসন বাড়ানো হলো তা বোঝা যাচ্ছে না। সূত্র: ডয়চে ভেলে
Discussion about this post