রামাদ্বানে যখন আমরা আমাদের দেহ ও মনকে বিশুদ্ধ করছি, তখন কেন এই সুযোগটাকে কাজে লাগাই না আমাদের সময়সূচী বিশুদ্ধকরণের জন্যও? যেসব অপ্রয়োজনীয় কাজগুলো আমাদের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়,সেগুলোকে ছেটে ফেলে হালকা হয়ে যাওয়ার জন্য রামাদ্বানই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে বিশাল পরিসর প্রয়োজন। তাই এই প্রবন্ধে আমরা শুধু আলোচনা করব সেই মূহুর্তগুলোকে ফিরিয়ে আনা নিয়ে যা নানা ধরণের প্রযুক্তির নেশা আমাদের থেকে কেড়ে নিয়েছে। সম্ভবত এদের সবগুলো আসলে নেশার মাঝে পড়ে না, বরং অনেক সময় আমাদের কর্তব্যের মাঝে অন্তর্ভুক্ত। তবুও হয়ত এইসব ‘অপরিহার্য’ কাজগুলো করতে গিয়েই নানাভাবে আমরা সময়ের অপচয় করছি। তাই আসুন একবার চোখ বুলিয়ে দেখি যে আপনি নিচের টিপসগুলো কোনোটা ব্যবহার করতে পারেন কি নাঃ
ফোন কল:
ফোন কল আমাদের অনেকটা সময় নিয়ে নিতে পারে। চেষ্টা করুন প্রতিটা ফোন কলের উত্তর দেয়ার অভ্যাস কমাতে এবং এর বদলে মনঃসংযোগ করুন সেইসব আগত ফোন কলের উপর যেগুলোতে আপনার আসলেই কথা বলা দরকার। অন্যদের জন্য আপনার ফোনে একটা ভয়েস মেসেজ ব্যবস্থা স্থাপন করুন যাতে তারা আপনাকে বার্তা পৌঁছে দিতে পারে যদি একান্তই জরুরী কিছু হয়। আর যখন আপনাকে কোনো ফোন করতে হবে, তখন আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখুন যে এই কল থেকে আপনি কি কাজ সারতে চান, যাতে মূল পয়েন্ট থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়ে সময় নষ্ট করে না ফেলেন। যখন ব্যবহার করছেন না, তখন আপনার মোবাইল ফোন/ ব্ল্যাকবেরি/ ট্যাবলেট বন্ধ রাখুন।জ্বী, এটাই ঠিক কাজ। প্রথমে যতই কষ্টসাধ্যই মনে হোক না কেন, এগুলো বন্ধ করে দেয়ার অভ্যাসের সাথে অভ্যস্ত হন যখন আপনি কুরআন তিলাওয়াত বা জিকির করছেন, অথবা মসজিদে যাচ্ছেন। এগুলোকে আরো বন্ধ রাখুন যখন আপনি ঘুমাতে যাচ্ছেন যাতে আপনার বিশ্রাম নেয়ার সামান্য সময়টুকু অবিবেচক ফোনকলকারী বা বার্তাজ্ঞাপনসূচক বিপ বিপ শব্দ দ্বারা আরো কমে না যায়।
সাবস্ক্রিপশনের তালিকা ছোট করুনঃ
যদি আপনার সাবক্রিপশনের তালিকা অনেক লম্বা হয়ে যায়, তাহলে এটা একটা ভালো সময় সেটাতে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়ার এবং যেগুলো এখন আর কোনো কাজে লাগছে না সেগুলোর বার্তা জ্ঞাপন থেকে নিজের নামটা সরিয়ে ফেলার।শুধুমাত্র উপকারী সাইটগুলোতে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত রাখুন যা এই রামাদ্বানে আপনার ঈমান এবং কর্মদক্ষতাকে উজ্জীবিত করবে।
আপনার ইনবক্সের উপর দয়া করুনঃ
ফিল্টার বা ফোল্ডার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন যাতে আপনার প্রয়োজনীয় ই-মেইলগুলো আলাদা হয়ে থাকে। এভাবে আপনি অপ্রয়োজনীয় মেইলগুলো পরে কোনো সময়ের জন্য তুলে রাখতে পারবেন বা একসাথে মুছে ফেলতে পারবেন। যেসব নিউজলেটার বা বার্তাজ্ঞাপনের দিকে আপনি কদাচিৎ দ্বিতীয়বার চোখ বুলান, সেগুলো থেকে নিজের নাম সরিয়ে ফেলুন যেন আপনি আর তাদের থেকে ই-মেইল না পান।‘ডিলিট’বাটনটি নির্দ্বিধায় ব্যবহার করুন।
ফেসবুকে প্রবেশের হার কমানঃ
এটা শুধু ফেসবুকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়।যেটার মাধ্যমে আপনি সামাজিক যোগাযোগ রক্ষাকারী সাইটে প্রবেশ করেন,সেটাতে প্রবেশের হার কমিয়ে দিন। আপনার বন্ধু মহলে যা কিছু ঘটছে তার সব কিছুর সাথে ১০০% সময়ের জন্য ‘অবহিত’ থাকার প্রলোভনকে দমন করুন।টুইটার, মাই স্পেস, ফোরাম ইত্যাদি থেকে সরে আসুন। আমি এগুলো একেবারেই বাদ দিতে পরামর্শ দিচ্ছিনা। আমি বলছি যে প্রতিদিন এসব কাজে লিপ্ত হওয়ার পরিবর্তে আপনি এগুলোর জন্য সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন সময় বরাদ্দ করুন। আপনার অনুসারী (ফলোয়ার) এবং বন্ধুদের আলাদা আলাদা তালিকাভুক্ত করে ফেলুন যাতে আপনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের খোঁজ খবর সহজেই রাখতে পারেন এবং বৃহত্তর পরিসরের লোকজনেরটা রেখে দিন যখন বেশী সময় থাকবে, তখনকার জন্য। প্রাইভেসী সেটিংটা এমনভাবে ঠিক করুন যাতে আপনার বার্তাজ্ঞাপনের (নোটিফিকেশন) সংখ্যা হ্রাস পায় এবং আপনি অপ্রয়োজনে এগুলো দ্বারা ব্যস্ত হয়ে না যান।
প্রযুক্তি ব্যবহারে সংযম অবলম্বনে প্রযুক্তি ব্যবহার করুনঃ
মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হওয়াটা প্রতিরোধ করে অথবা ইন্টারনেটে প্রবেশ বন্ধ করে এমন সফটওয়্যার ব্যবহার করুন যাতে হাতের কাজের প্রতি আপনার মনোযোগ নিবদ্ধ রাখতে পারেন এবং ‘মাত্র অল্প সময়ের জন্য একটু ঘুরে আসা’র প্রলোভনকে প্রতিহত করতে পারেন। আমরা সবাই জানি যে আমরা যখন এই প্রলোভনের শিকার হয়ে যাই তখন একটার পর একটা ক্লিক করে ওয়েব জগতে হারিয়ে যাওয়াটা খুবই সহজ।এসব মনোযোগ ব্যাঘাতকারী বিষয় এড়িয়ে চলতে Read It Later কিংবা Ghoster এর মত অপশনগুলো দিয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প বিরতিগুলো নষ্ট করবেন নাঃ
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে বা ভ্রমণে আপনার যে সময়টা ব্যয় হয়, তা টুইটারে টুইট করতে বা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিতে গিয়ে কাটানো উচিৎ না, বরং এটা ব্যয় করা উচিৎ কিছু নীরব দুআ বা যিকির বা অন্তত কিছু আধ্যাত্মিক গভীর চিন্তা/ প্রতিফলনে। এসময়টাতে ফোন বা mp3 প্লেয়ারে কুরআন তিলাওয়াত শুনে আপনি আপনার তিলাওয়াত/ মুখস্থ করণকে উন্নত করতে পারেন।
মানুষকে অবহিত করুনঃ
এটা মানুষকে জানিয়ে দেয়া ভালো যে এটা একটা বিশেষ মাস এবং আপনাকে আগের মত সবসময় সহজে পাওয়া যাবে না। এভাবে আপনি বাইরে থেকে আসা মনোযোগ ব্যাঘাতকারী বিষয়গুলো কাটিয়ে উঠতে পারবেন।মানুষকে এটা কিভাবে জানাবেন এটা আপনার উপরে নির্ভর করছে-হতে পারে চ্যাট ক্লায়েন্টে স্ট্যাটাস মেসেজের মাধ্যমে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ রক্ষাকারী সাইটে স্ট্যাটাস আপডেট দিয়ে কিংবা সরাসরি বলে দিয়ে—শুধু মনে রাখবেন এটা যেন বিনয়ের সাথে হয়।
এই মাসের জন্য (অন্তত পক্ষে কিছুটা সময়) প্রযুক্তির দরজা বন্ধ করে রাখাকে উপভোগ করুন।চিন্তা করবেন না-পৃথিবীটা অপেক্ষা করতে সক্ষম।
অনুবাদ: হামিদা মুবাশ্বেরা | প্রকাশনায়: কুরআনের আলো
Discussion about this post