প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সমাজ অত্যন্ত সংকীর্ণ। কিন্তু আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন এবং যে রাষ্ট্র গঠন করলেন সেখানে নারীদের জন্য আলাদা সুযোগ ও আসন রেখেছিলেন। তিনি যেমন নারীদের এগিয়ে রেখেছিলেন, সেখান থেকেই নারীরা এখনও এগিয়ে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ শীর্ষে।
নারী হিসেবে নিজের পথচলার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আমার পরিবারের সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি এবং আমার বোন প্রবাসে থাকায় ভাগ্যক্রমে সেদিন বেচে যাই। এরপর থেকে আমার পথচলা মসৃন ছিল না। আমাকে বহুবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার উপর গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
তবুও আমি থেমে থাকিনি। বাংলাদেশের নারীরা আজ অনেক এগিয়ে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ে থেকে নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছে। নারী শুধু নারী নয়। নারীরা মায়ের জাতি।
নারীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে নারীদের শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে তাদের চাকরির জন্য সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে। সরকারি চাকরিতে নারীদের সরব অংশগ্রহণ রয়েছে। আমার পিতা সেই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। আমার পিতা আমার অনুপ্রেরণা। এখন নারীরা শুধু ঘরবন্দি না, পুলিশ, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সরকারি- বেসরকারি চাকরিতে নারীদের সমান অংশগ্রহণ রয়েছে। নারীদের স্বাস্থ্য সেবা ও খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রম চালু রয়েছে। আমরা সব জায়গায় কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছি ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে দুবাই এক্সপোতে আয়োজিত ‘রিডিফাইনিং দ্যা ফিউচার ফর উইমেন’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দুবাই এক্সিবিশন সেন্টারের সাউথ হলে এ আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল ওমেনস ডে ফোরাম : ব্রেক দ্যা বিচ।
দুবাইয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন পার্সন ওমর বুট্টির সঞ্চালনায় বিষয় ভিত্তিক আলোচনার এই সেশনে অংশ নেন ইউএনএফপিএ’র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. নাটালিয়া কানেম। এছাড়াও ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতির কূটনৈতিক উপদেষ্টা ড. আনোয়ার গারগাশ এবং ওমেন টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউটিও) ডিরেক্টর জেনারেল ড. গোজি আকুঞ্জ-ওয়ালা।
আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মুখপাত্র মিসেস ইভন এনডেগে। এরপর নারী দিবস উপলক্ষে দুবাই এক্সপোতে অবস্থিত ওমেনস প্যাভিলিয়ন নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। আলোচ্য বিষয় নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমি ও কারটিয়ার ইন্টারন্যাশনালের সিইও অ্যান্ড প্রেসিডেন্ট সিরিল ভিগনারন। এ সময় নারী দিবস নিয়ে জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল আমিনা মোহাম্মদ ও সুইডিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান লিন্ডের ভিডিও বার্তা প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়কমন্ত্রী ইমরান আহমদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলে ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনসহ দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।
Discussion about this post