এবার ফেটে গেছে ভাড়ায় আনা বিমানের উইন্ডশিল্ড। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর পাইলট দেখতে পান বিমানের ককপিটের উইন্ডশিল্ড ভাঙা। বাধ্য হয়ে উড়োজাহাজ ফেলে ঢাকায় ফিরে আসেন পাইলট ক্যাপ্টেন শাখাওয়াত হোসেন ও কো পাইলট আবরার।
গ্রাউন্ডেড ষোষণা করা হয় উড়োজাহাজটি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের প্রকৌশল বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভয়াবহ বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বিমান ও শতাধিক যাত্রী। কারণ ফাটলটি এমনভাবে হয়েছে যে, যদি আকাশে উইন্ডশিল্ড আরও বেশি ফেটে যেত তাহলে এয়ারক্রাফটির বড় ধরনের বিপদের শঙ্কা ছিল। এদিকে ওই উড়োজাহাজের ফিরতি ফ্লাইটের যাত্রী পরিবহণের জন্য ঢাকা থেকে পাঠানো হয় আরেকটি বিমান।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভাড়ায় আনা বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে, এটি এখন আর ফ্লাইট পরিচালনার জন্য উপযুক্ত নয়। তারপরও বিমান বাধ্য হয়ে মোটা অঙ্কের টাকায় এরকম একটি উড়োজাহাজ কিনে নিচ্ছে। অভিযোগ আছে, এই উড়োজাহাজটি দিয়ে গত বছর করোনাকালীন একচেটিয়া কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছিল।
যার কারণে যাত্রী কেবিনসহ উড়োজাহাজটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্পেয়ারপার্টস নষ্ট হয়ে গেছে। বিষয়টি টের পেয়ে মালিকপক্ষ এখন আর উড়োজাহাজটি নিতে রাজি হচ্ছে না। আর বিমানের পরিকল্পনা বিভাগের একটি সিন্ডিকেট এই সুযোগে বড় অঙ্কের টাকায় এয়ারক্রাফটি কিনে নিতে বাধ্য করছে বিমানকে।
এদিকে উইন্ডশিল্ড ভাঙা এয়ারক্রাফটি ফেরত আনার জন্য মঙ্গলবার ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর পৌঁছেছে ২০ সদস্যের একটি রেসকিউ টিম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ মেরামতের পর উড়োজাহাজটি ঢাকায় ফিরে আসার কথা রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ভোরে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর উড়োজাহাজের উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখতে পান বৈমানিক ক্যাপ্টেন শাখওয়াত হোসেন। নিয়ম অনুযায়ী উইন্ডশিল্ডে ফাটলের বিষয়টি বিমান কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন বৈমানিক শাখাওয়াত। পরে মেরামতের জন্য কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে গ্রাউন্ডেড করা হয় উড়োজাহাজটি। একই সঙ্গে বাতিল করা হয় কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকার ফিরতি ফ্লাইটটিও।
এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল বিভাগ বলছে, মঙ্গলবার ঢাকা থেকে বিশেষ যে ফ্লাইটটি কুয়ালালামপুরে গেছে সেটিতে বিমানের প্রকৌশলীসহ এক সেট উইন্ডশিল্ড পাঠানো হয়েছে। প্রকৌশলীরা কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে গ্রাউন্ডেড হওয়া এস২-এএফএম উড়োজাহাজের ফাটল ধরা উইন্ডশিল্ড খুলে নতুন উইন্ডশিল্ড স্থাপন করবেন। সাধারণত বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজের উইন্ডশিল্ড খুলতে চার ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়।
আবার নতুন উইন্ডশিল্ড স্থাপন করতেও প্রায় চার ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে। এরপর শুকাতে সময় লাগে ৩-৪ ঘণ্টা। সে হিসাবে শেষ রাতের দিকে কিংবা আজকের মধ্যেই উড়োজাহাজটি উড্ডয়ন উপযোগী করার আশা দেখছেন প্রকৌশলীরা। আর এস২-এএফএম উড়োজাহাজটি উড্ডয়ন উপযোগী হলে সেটি দিয়েই আজকের কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকার ফ্লাইটটি পরিচালনা করা হবে।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি। একইভাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকারও সাড়া দেননি।
উল্লেখ্য, এস২-এএফএম রেজিস্ট্রেশনের বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজটি ২০০৯ সালে আয়ারল্যান্ড থেকে ইজারায় নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে বিমান। সম্প্রতি এ উড়োজাহাজটি কেনার অনুমতি পেতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। উড়োজাহাজটির দাম ধরা হয়েছে ৯৭ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় উড়োজাহাজটির দাম পড়বে ৮৩ কোটি ৯৮ লাখ ২৭ হাজার ৬২৫ টাকা।
ওই সময় আয়ারল্যান্ড থেকে আরও একটি বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজ ইজারা নিয়েছিল বিমান। যেটির রেজিস্ট্রেশন নং এস২-এএফএল। সমপরিমাণ দামে ওই উড়োজাহাজটিও কেনার অনুমতি চেয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। উড়োজাহাজ দুটি কিনতে আয়ারল্যান্ডের সেলেসটিয়াল এভিয়েশন ট্রেডিং ৪১ লিমিটেডের সঙ্গে ২৩ ডিসেম্বর চুক্তি করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। উড়োজাহাজ দুটি একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৯ সালের অক্টোবরে ড্রাই লিজের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছিল।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, করোনা মহামারির শুরুতে যখন যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধ ছিল সে সময় এস২-এএফএম এবং এস২-এএফএল রেজিস্ট্রেশনের বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজ দিয়ে কার্গো পরিবহণ করতে গিয়ে ইন্টেরিয়র ডেকোরেটরসহ বিভিন্ন মূল্যবান গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্রের ক্ষতি হয়েছে। ভাড়ায় আনা দুটি উড়োজাহাজের ক্ষতি হওয়ায় সেগুলো আর ফেরত নিতে চায়নি মালিকপক্ষ।
যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি পক্ষের যোগসাজশে ওই উড়োজাহাজ দুটি কিনতে বাধ্য হচ্ছে বিমান। তিনি বলেন, অভিযোগ এসেছে উড়োজাহাজগুলোর ক্ষতি করা কার্গো সিন্ডিকেটে রয়েছেন বিমানের একজন পরিচালক (যাকে সম্প্রতি মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগেরও অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে)। ট্রেনিং বিভাগের একজন বৈমানিক ও কার্গো শাখার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও এ সিন্ডিকেটের সদস্য।
Discussion about this post