নজরুল ইসলাম টিপু: ১০৮০ একর স্থাপনার উপর গড়ে উঠা এক্সপো দুবাই-২০২০ বাংলাদেশের বহু সুখ-দুঃখের অনুঘটক হয়ে আজো জীবিত আছে। আর কিছুদিন পরেই এটি বন্ধ হয়ে যাবে। আমি নিজ হাতে এই মেলার বহু বিচিত্র ছবি ধারণ করেছি। তার অনেকগুলো আগেই শেয়ার করেছি, সামনের দিনগুলোতে সময় সুযোগ করে শেয়ার হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশীদের দুর্দিন শুরু হয়েছিল এই এক্সপোকে কেন্দ্র করেই। ওটা ছিল বাংলাদেশ সরকারের একটি রাজনৈতিক বিপর্যয়, ভুল সিদ্ধান্ত যার চরম মাশুল এখনও বাংলাদেশীদের দিতে হচ্ছে।
দুবাই এক্সপোর প্রতিযোগিতায় টিকে যাচ্ছে, এমন অগ্রিম পরিস্থিতি দেখা যাবার পরও বাংলাদেশ সরকার নিজের ভোটটি দিয়েছিল “রাশিয়া” কে! সরকারের কাছে দুধ ও বাচা দেওয়া গাইয়ের স্থলে, মূত্র দেওয়া বলদের গুরুত্ব কেন বেড়ে গিয়েছিল, তা আজো জানা যায়নি।
ভোট না দেবার বিষয়টি আমিরাত সরকার অ-বন্ধুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার হিসেবে বিবেচনায় নেয়। এই কারণে তারা বাহ্যিক-ভাবে মুচকি হাসলেও, পরবর্তীতে তা বাংলাদেশীদের জন্য প্রলয়োল্লাসে রূপ নেয়।
বাংলাদেশীদের সকল প্রকার ভিসা বন্ধ করা হয়। কর্মক্ষেত্র সংকুচিত করা হয়। সরকারী নানা চাকুরী থেকে বাঙ্গাল বিতাড়ণ শুরু হয়। কারো চাকুরী চলে গেলে, সেটা পুনঃ-স্থাপনের সুযোগ রহিত করা হয়। অনেকেই ধনী ব্যবসায়ীক সেজে লাইসেন্স খুলে, রাস্তার বোতল কুড়িয়ে জীবন চালাতে বাধ্য হয়! ফলে দলে দলে বাঙ্গালীরা চাকুরী খুইয়ে, ব্যবসা হারিয়ে পথে বসে যায়। নেপালের মত ক্ষুদ্র দেশ আমিরাতকে ভোট দিয়ে নজর কেড়ে নেয়। তারা তলে তলে বাংলাদেশীদের স্থলাভিষিক্ত হতে শুরু করে। বাংলাদেশীদের চেয়ে কম বেতনে তারা এই দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
আমিরাতের দেখাদেখি প্রায় কাছাকাছি একই ধরনের পদ্ধতি গ্রহণ করে, মধ্য প্রাচ্যের অন্যান্য দেশ গুলো। মধ্যপ্রাচ্যে কোন নতুন কানুন আসলেই, প্রথম যে সম্প্রদায় বিভীষিকার মুখোমুখি হত, তারা ছিল বাঙ্গালী।
মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের কাজ হয়েছে এই এক্সপোকে ঘিরে। বহু দেশ বহু জাতির মানুষ এই প্রজেক্টে কাজ করেছে নিজেদের দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পিছনে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু বাঙ্গালীরা এখানে তেমন সুবিধা করতে পারেনি। বাইরের কিছু কোম্পানির জনবল স্বল্পতা দেখা দিলে, বেকার বাঙ্গালীদের ঘণ্টা ওয়ারী ভাড়া নিয়ে কাজ চালাত। এক্সপোর এমন মহাযজ্ঞে, বাঙ্গালীরা শুধুমাত্র এতটুকু অবদান রাখতে পেরেছিল; এর বাইরে কিছু না।
এখন এক্সপো দেখার জন্য, নিজের পকেটের টাকাটা খরচ করে দলে দলে দেশের মানুষ দুবাই আসছে। অথচ এর চেয়েও অনেক বেশী কিছু অপেক্ষায় ছিল কিন্তু আমরা চরমভাবে ভাগ্য বিড়ম্বিত হয়েছি, কেননা বুদ্ধি-জ্ঞান আর অহমিকায় আমরা বাঙ্গালী!
( পাঠকের নিজস্ব মতামত, এর জন্য আমিরাত সংবাদ দায়ী না)
Discussion about this post