প্রবাসীদের দফায় দফায় আবেদনের পরও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে কমছে না বিমান ভাড়া। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রবাসীরা। অতিরিক্ত ভাড়ার ব্যবস্থা করতে না পেরে অনেকে গন্তব্যে যেতে পারছে না। এ অবস্থা বিমান ভাড়া না কমালে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে প্রবাসী সংগঠনগুলো।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে বিমানের টিকিটের দাম গত কয়েক মাসের ব্যবধানে চার-পাঁচগুণ বেড়ে গেছে। ট্রাভেল এজেন্সি ও সংশ্লিষ্টরা এর জন্য করোনার কারণে ফ্লাইট বন্ধের গুজব এবং সিন্ডিকেটকে দুষছেন। তারা মনে করেন, এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
প্রবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, আগে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে যেখানে ৩০-৪০ হাজার টাকায় যাওয়া যেতো, সেই ভাড়া এখন লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বিমান ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা প্রবাসী কর্মীরা। টিকিটের দাম বেশি হওয়ায় প্রবাসীরা কীভাবে গন্তব্যে ফিরবেন কোনও উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। এমনকি কোন কোন প্রবাসী বছরেও লাখ টাকা বেতনও পায় না। এখন এত টাকা দিয়ে টিকিট কেটে গন্তব্যে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া রয়েছে ফ্লাইটের সংকট।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইনসহ কয়েকটি দেশে ৭০ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। এসব দেশে তারা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করেন। বেশিভাগ প্রবাসী বাংলাদেশ বিমান, এমিরেটস এয়ারলাইন্স, ফ্লাইদুবাই, এয়ার আরাবিয়া, সৌদি এয়ারলাইন্স, কুয়েত এয়ারওয়েজ, জাজিরা এয়ারলাইন্স, ওমান এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ, সালাম এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা, ইতিহাদ এয়ারলাইন্সসহ বিভিন্ন বিমান ব্যবহার করেন। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে বিমান ভাড়া চার থেকে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসীরা ভোগান্তিতে রয়েছেন।
বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব সংযুক্ত আরব আমিরাত’র প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট শিবলী আল সাদিক বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে বিমান ভাড়া নিয়ে যেভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে তা দেখার কেউ নেই। আগে যেখানে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় প্রবাসীরা দেশে যাতায়াত করত, সেখানে এখন এক লাখ ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রবাসীরা।’
এদিকে হুট করে মধ্যপ্রাচ্য রুটে টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, সারা বিশ্বে বিমান ভাড়া নির্ধারণ হয় প্রায় একই পদ্ধতিতে। চাহিদা বাড়লে ভাড়া বাড়তে থাকে। একইসঙ্গে ফ্লাইটের কাছাকাছি সময়ে ভাড়া বেড়ে যায়। চাহিদা কমতে থাকলে ভাড়াও কমে আসে। মধ্যপ্রাচ্য রুটে ভাড়া বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটকে দায়ী করছে এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। সংগঠনটি গত মাসে সংবাদ সম্মেলন করে ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণের দাবি জানায়। সংবাদ সম্মেলনে আটাব নেতৃবৃন্দ বলেন, সিন্ডিকেট করে অনৈতিকভাবে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। ভাড়া এত বেশি যে প্রবাসী কর্মীদের পক্ষে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অনেকে সুদের ওপর ঋণ নিয়েও অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। অভিবাসী কর্মীরা দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে আছে।
জানতে চাইলে ওমান সমিতি, চট্টগ্রামের সভাপতি এবং এনআরবি সিআইপি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী সিআইপি বলেন, ‘বিমানের ভাড়া কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসীরা কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারছে না। এই নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় চিঠি দেওয়ার পরও মন্ত্রণালয় কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ অবস্থা চলমান থাকলে প্রবাসীরা বাধ্য হয়ে তাদের অধিকার রক্ষায় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। অপরদিকে প্রবাসীরা কর্মস্থলে ফিরে যেতে না পারায় রেমিটেন্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। আবার টিকিটের টাকা যোগাড় করতে না পেরে অনেকের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে এবং অনেকে বিদেশে তাদের চাকরি হারিয়ে বাংলাদেশে বাধ্য হয়ে জীবনের তাগিদে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় টিকেটের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে না আসলে দেশ ক্ষতির সম্মুখীন হবে। একই সাথে প্রবাসীদের মাঝে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।’
পূর্বকোণ/ মোহাম্মদ আলী
Discussion about this post