পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়, যা আগে ছিল দশম। দেশে পেঁয়াজের নতুন জাতগুলো যদি সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে চাষাবাদ করা হয়, তাহলে পেঁয়াজ উৎপাদনে খুব শিগগিরই আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারব। গতকাল গাজীপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বারি) গ্রীষ্মকালীন বা সারা বছর চাষ উপযোগী বারি পেঁয়াজ-৫-এর উৎপাদন কলাকৌশল শীর্ষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে কৃষি বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন। বারি’র মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার প্রধান অতিথি হিসেবে আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে কৃষি বিজ্ঞানীরা জানান, আমাদের দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩৫ থেকে ৩৬ লাখ মেট্রিক টন। সেখানে গত বছর আমাদের পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩২ লাখ মেট্রিক টন। গত এক বছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় আট লাখ মেট্রিক টন। বারি’র মসলা গবেষণা কেন্দ্র এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের ৪৭টি জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে পেঁয়াজের জাত ছয়টি। প্রতি বছর আমাদের প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, যা মোট মসলা আমদানির অর্ধেক।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, বারি পেঁয়াজ-৫ আগাম ও নাবি খরিপ মৌসুমে আবাদ উপযোগী স্বল্পমেয়াদি গ্রীষ্মকালীন। তবে সারা বছর চাষের উপযোগী উচ্চ ফলনশীল জাত। প্রতিটি গাছের উচ্চতা ৫০ থেকে ৫৫ সেন্টিমিটার এবং প্রতিটি গাছে ১০ থেকে ১২টি পাতা হয়। কন্দ গোলাকার এবং লালচে বর্ণের। প্রতিটি কন্দের গড় ওজন ৯০ থেকে ১০০ গ্রাম। বাংলাদেশে পেঁয়াজের জাতীয় গড় ফলন হেক্টর-প্রতি ১০.৫৬ টন হলেও বারি পেঁয়াজ-৫-এর হেক্টর-প্রতি ফলন ১৬ থেকে ২২ টন। গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ আগাম চাষে মার্চ থেকে জুন এবং নাবি চাষে আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসে চাষ করা যায়।
বারি’র গাজীপুরে আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হরিদাস চন্দ্র মোহন্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) ড. মো: কামরুল হাসান, পরিচালক (গবেষণা) ড. মো: তারিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারি’র মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিবেদিতা নাথ। ‘বাংলাদেশে মসলাজাতীয় ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্প’-এর অর্থায়নে আয়োজিত এ মাঠ দিবসে ১০০ জন কৃষক অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও বারি’র আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
Discussion about this post