মুহাম্মাদ শোয়াইব
সন্ত্রাসী হুথি মিলিশিয়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবু ধাবিতে ড্রোন হামলার করার মাধ্যমে প্রকাশ্যে তার অপরাধী মুখের কদর্যতা প্রকাশ করে দিল। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা করা নিশ্চয় একটি নিলর্জ্জ ও গর্হিত অপরাধ।
পৃথিবীর কোনো মানবিক মূল্যবোধ কখনোই এই জাতীয় কাপুরুষোচিত হামলাকে স্বীকৃতি দেয় না। কোনো আন্তর্জাতিক নিয়ম বা আইনকে স্বীকৃতি দেয় না। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে বেসামরিক এলাকা টার্গেট করার ফলে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের এবং আহত হয়েছেন ৬ জন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে হুথি মিলিশিয়াদের বিস্ফোরক বহনকারী ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।
এ হামলায় পেট্রোলিয়াম ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণ এবং আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির (এডিএনওসি) কাছে মুসাফ্ফায় অগ্নিকাণ্ডের ফলে বেসামরিক সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়েছে।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সর্বশেষ হামলাটি হুথি মিলিশিয়াদের পক্ষ থেকে আগ্রাসনের একটি তীব্র রূপ যা এই অঞ্চলে উত্তেজনা আরো বাড়াচ্ছে।
গত ২ জানুয়ারি আল হুদায়াহ গভর্নরেটের উপকূলে ইউএইর পতাকাবাহী রাওয়াবি নামক কার্গো জাহাজ হাইজ্যাকের পর এটি সন্ত্রাসী হামলার পুনরাবৃত্তি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মনে করে যে, বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে সাম্প্রতিক ড্রোন হামলা ও নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা একটি বেআইনি, কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসবাদী কাজ এবং আন্তর্জাতিক আইন ও সভ্য আচরণের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে পারে উল্লেখ করে বাংলাদেশ হুথি মিলিশিয়াদের এই ধরনের বেআইনি কার্যকলাপের পুনরাবৃত্তি এবং ইচ্ছাকৃত উত্তেজনা বৃদ্ধি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
ঢাকা সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তার ভ্রাতৃপ্রতীম জনগণের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য যে কোনো হুমকির বিরুদ্ধে দৃঢ় সংহতি প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সকল প্রচেষ্টার প্রতি অবিচল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই নাশকতামূলক অপারেশনের মাধ্যমে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করতে চাওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসী অপরাধী মিলিশিয়া তার বদ্ধ ও সীমিত জ্ঞানের মাধ্যমে যা উপলব্ধি করতে পারে না তা হলো যে আবুধাবিতে বেসামরিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার দ্বারা কখনোই দেশটির নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে সক্ষম হবে না। এই দেশটি তার পূর্বপুরুষরা সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য নিরাপদ কিল্লা রূপে গড়ে তুলেছেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এর শাসকগণ দেশটিতে অবস্থানরত নাগরিক ও বিদেশী সকলের জন্য নিরাপত্তার প্রকান্ড ব্যূহরূপে গড়ে তুলেছেন। এমনকি এখানে ধর্ম বর্ণ কোনো কিছুর মাধ্যেমে বৈষম্য করা হয় না। এখানে সবাই মানুষ হিসেবে বিবেচিত হয়। মানুষ হিসেবে মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়।
হুথিরা যা করল তা নিঃসন্দেহে একটি সন্ত্রাসী কার্যক্রম। তারা তাদের এহেন জঘন্য কর্মের মাধ্যমে লজ্জা ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনবে না। যারা পেছন থেকে এটিকে সমর্থন করে তারা নিশ্চয় সন্ত্রাসী কার্যক্রমেই মদদ দিচ্ছে।
সৌদির নেতৃত্বে আরব জোট শুরু থেকেই এই জোটকে সমর্থন দেয়নি। শুধুমাত্র এই জন্য যে, এরা একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। আর হুথিরা আমিরাতে হামলা করার মাধ্যমে তাদের সেই অপরাধ প্রবণতার প্রমাণ দিল বিশ্ববাসীর কাছে। আরব জোট শান্তির জন্য এক হাজার সেতু নির্মাণ করলেও, এই সন্ত্রাসীগোষ্ঠিটি কোনো শান্তির সেতুতেই আরোহন করেনি। তারা ক্রমাগত সন্ত্রাসী কার্যক্রমই চালিয়ে আসছিল। ইয়ামনের সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে তারা ক্ষমতা দখল করে এই অপরাধ তার করছে বছরের পর বছর।
এই গোষ্ঠিটি শুধুই অপরাধের ভাষা জানে। এরা জনগণের শান্তির ভাষা জানে না। আর তাই আরব জোট শুরু থেকেই তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম সম্পর্কে বিশ্বসাকিকে সতর্ক করে আসছিল।
তাদের এই অপরাধের মাত্রার লাগাম এখনই না টানলে তারা অদূর ভব্যিষতে আরও ভয়ংকর রূপে আত্ম প্রকাশ করতে পারে।
এই জঘন্য অপরাধের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বচ্ছ এবং দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে এই সন্ত্রাসী মিলিশিয়াকে আমিরাতি দুর্গের শক্তি এবং স্থায়িত্ব সম্পর্কে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠায়। এই রাস্তা আমিরাতের রাস্তা নয়। এটি সন্ত্রাসীদের রাস্তা। আমিরাত সবসময় এই রাস্তা পরিহার করে।

























