পায়ে হেঁটে হজ করা দিনাজপুরের একমাত্র হাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি দিনাজপুর সদর উপজেলার ৯ নম্বর আস্করপুর ইউপির খসরুর মোড়স্থ মেয়ের বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১১৫ বছর।
সোমবার বাদ জোহর দুপুর ২টায় রামসাগর বায়তুল আকসা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে নিজ বাড়ি দীঘিপাড়াস্থ পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। তার জানাজার নামাজে ইমামতি করেন মরহুমের নাতী হাফেজ মো: মুরসালিন হাসান। মরহুমের নামাযে জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
মরহুমের পারিবারিক সূত্র জানায়, হাজী মহিউদ্দিন রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় দিনাজপুর সদর উপজেলার ৯ নম্বর আস্করপুর ইউনিয়নের খসরুর মোড়ে তৃতীয় মেয়ের বাসায় ইন্তেকাল করেন।
হাজী মহিউদ্দিন ১৯০৬ সালে ১০ আগস্ট দিনাজপুর সদর উপজেলার ৯ নম্বর আস্কপুর ইউনিয়নের রামসাগর দিঘিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্রে (আইডি কার্ড) দেখা যায় জন্ম তারিখ ১০ আগস্ট ১৯০৬ সাল। ওই হিসেবে তার বয়স হয়েছিল ১১৫ বছর ২ মাস ১ দিন। তার বাবা ছিলেন মরহুম ইজার উদ্দিন পণ্ডিত ও মা মমিরন নেছা। তিনি দীর্ঘ দিন দিনাজপুরের ঐতিহাসিক রামসাগর জাতীয় উদ্যানের বায়তুল আকসা জামে মসজিদে ইমামতি করেন।
এলাকাবাসীর জানান, বর্তমানে এই এলাকায় তার বয়সী কোনো মানুষ বেঁচে নেই। তিনিই সবচেয়ে বেশি বয়সী মানুষ। তিনি খুব ভালো ও পরোপকারী মানুষ ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে হজ করার উদ্দেশে পায়ে হেঁটে দিনাজপুর থেকে রওনা দেন তিনি। পায়ে হেঁটে হজ করতে যেতে-আসতে তার সময় লেগেছিল মোট ১৮ মাস। এই ১৮ মাসে তিনি পাড়ি দেন কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ। এ সময়ে তিনি সফর করেন ৩০টি দেশ। যে দেশগেুলো তিনি সফর করেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুখস্ত বলতে পারতেন সেসব দেশের নাম। ওই সময়ে হজে যেতে পাসপোর্ট ও ভিসা করতে তার খরচ হয় ১ হাজার ২০০ টাকা। আর্থিক সার্মথ্য না থাকলেও অদম্য ইচ্ছা নিয়ে আর এলাকাবাসীর সহায়তায় হেঁটেই করতে যান তিনি। কখনো হেঁটে, কখনোবা জাহাজে, আবার কখনো স্থানীয় যানবাহনে চড়ে ৩০টি দেশ ঘুরে ঘুরে তিনি পৌঁছান প্রিয় নবিজির পবিত্র ভূমি মক্কা-মদীনায়। তার জীবদ্দশায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি শুনিয়েছিলেন তার সেই হজে যাওয়ার ভ্রমণ কাহিনী।
নয়া দিগন্ত
Discussion about this post