মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনের রাজধানী মানামায় বাংলাদেশীসহ বিদেশী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান। গত সপ্তাহে পরিচালিত এই সাঁড়াশি অভিযানে ধরা পড়েছে অনেক বিদেশী শ্রমিক। এরমধ্যে কতজন বাংলাদেশী কর্মী রয়েছে তার পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
তবে দেশটির লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটির (এলএমআরএ) ডেপুটি সিইও অব লিগ্যাল কন্ট্রোল ড. খালেদ মুহাম্মদ আবদুর রহমান জানিয়েছেন, বাহরাইনের মানামায় পরিচালিত অভিযানে আইন লঙ্ঘনকারী যেসব প্রবাসী শ্রমিক আটক হয়েছে তাদেরকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে এবং পুনরায় তাদেরকে বাহরাইন ফেরার সুযোগ দেয়া হবে না। ধরপাকড় অভিযান প্রসঙ্গে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বাংলাদেশী শ্রমিকদের উদ্দেশে দূতাবাসের নিজস্ব ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়।
সেখানে বলা হয়েছে, লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটি (এলএমআরএ) ও বাহরাইন সরকারের কয়েকটি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে গত ২ আগস্ট রাজধানী মানামার ছাছা নামক রোডের বেশ কিছু এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বাহরাইন কর্তৃপক্ষ ওই সব শ্রমিককে আটক করে। মূলত যারা নগর আইন, স্বাস্থ্যবিধি আইন, শ্রমবাজার সংক্রান্ত নিয়ম ভঙ্গ করে রাস্তায় অবৈধভাবে বেচাকেনার দোকান ও স্টল বসিয়েছিল তাদের আটক করা হয়। দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বৈধভাবে শ্রমবাজারে কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা।
অভিযান প্রসঙ্গে লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটি (এলএমআরএ) এর ডেপুুটি সিইও অব লিগ্যাল কন্ট্রোল ড. খালেদ মুহাম্মদ আবদুর রহমান বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, অভিযানে যেসব প্রবাসী কর্মী আইন লঙ্ঘন করে রাস্তায় বেচাকেনা অবস্থায় ধরা পড়বে, ভবিষ্যতে তাদেরকে বৈধ কাজের ভিসা দেয়া হবে না। নিয়মিত শ্রমিক হিসেবে কাজ করারও সুযোগ দেয়া হবে না। বাহরাইন সরকারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে খালেদ মুহাম্মদ তার বক্তব্য আরো বলেছেন, এসব শ্রমিককে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করানোর পাশাপাশি আর কখনোই তাদেরকে বাহরাইনে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হবে না। কাজের সুন্দর পরিবেশ ও সুসংগঠিত শ্রমবাজার তৈরির প্রত্যয়ে বাহরাইন সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলা হয়, শ্রমবাজারের নেতিবাচক দিকগুলো সমাধান করে দক্ষ ও নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েই অভিযানগুলো পরিচালিত হচ্ছে। তার মতে, বাহরাইনের শ্রমবাজারের উন্নতি ও নেতিবাচক প্রভাব দূর করার লক্ষ্যে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে।
যেসব প্রবাসী কর্মী বাহরাইনের শ্রম আইন ভঙ্গ করবে, তাদের সাথে কোনো ধরনের লেনদেন না করার জন্যও দেশের সাধারণ নাগরিকদের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন বলে দূতাবাসের দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, শ্রমবাজারের নিয়ম বহির্ভূত কোনো কর্মাকাণ্ড পরিলক্ষিত হলে বা অবৈধ কর্মীর বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে এলএমআরএ-এর কল সেন্টারের এই নম্বরে ১৭৫০৬০৫৫ সরাসারি যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এলএমআর ও বাহরাইন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে এমন অভিযান প্রতি সপ্তাহে পরিচালিত হচ্ছে এবং হতে থাকবে উল্লেখ করে বলা হয়, সকল প্রবাসী কর্মীদের সতর্কতার সাথে বাহরাইনের আইন-কানুন মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে দেশটির আখবার আল খালিজ, আল আইয়্যাম, আল বিলাদ, আল ওয়াতান, এলএমআরএ ওয়েবসাইট সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে।
এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনে প্রবেশে বাংলাদেশীদের জন্য যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল সেটি তুলে নিয়েছে দেশটির সরকার। আগামী রোববার থেকে দেশটিতে বাংলাদেশীরা যেতে পারবে।
গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতি ইস্যুতে লাল তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম সরানোর ঘোষণা দিয়েছে বাহরাইন। ১০ অক্টোবর থেকে দেশটির রেড লিস্টে আর থাকছে না বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশীরা দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবে।
Discussion about this post