দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে বিভিন্ন কর্মসূচি ঠিক করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে সচিবদের সাথে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার ঘোষণা আসার পর মাঠপর্যায়েও প্রস্তুতির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামও শিগগিরই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর সরকারের একটি কর্মসূচির ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এর আগে বেশ কয়েকবারই বলেছেন, করোনার প্রভাব এখন কমে আসছে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সব ধরনের প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে। চলতি মাসের ৩১ তারিখে শেষ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি। আশা করা হচ্ছে এর পরে ছুটি না বাড়িয়ে বরং এর আগেই প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে ইতিবাচক কোনো ঘোষণা আসতে পারে।
এ দিকে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসার পর মাঠপর্যায়ে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর সুরিটোলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিন দেখা যায় এই স্কুলের মোট ১২ জন শিক্ষকের মধ্যে ১০ জন শিক্ষকই উপস্থিত রয়েছেন। স্কুল তো বন্ধ, তা হলেও কেন তারা স্কুলে এসেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, সরকার স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরই স্কুলে এসে অফিস করতে হবে।
ডিপিইর নির্দেশনায় প্রধান শিক্ষক কিংবা একজন সিনিয়র সহকারী শিক্ষকসহ অন্য আরো দু-তিনজন শিক্ষককে প্রতিদিন অফিসে আসতে বলা হয়েছে। একই সাথে প্রতিটি স্কুলের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাজের তদারকি করতেও ডিপিই থেকে নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে স্কুল খোলার পর কোনো শিক্ষার্থী যেন ডেঙ্গু বা এডিস মশার মাধ্যমে আক্রান্ত না হয়, সে জন্যই স্কুলের ভেতরে বা আশপাশে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করতে বলা হয়েছে।
রাজধানীর সুরিটোলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনিসুর রহমান নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে জানান, ডিপিইর নির্দেশনার আলোকেই আমরা শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে এসে হাজিরা দিচ্ছি। স্কুলের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাজেরও নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। স্কুল খোলার ঘোষণা আসার পর যাতে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘেœ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ক্লাসে ফিরতে পারে সে জন্যই সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
অবশ্য এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে এখন আর করোনার সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নামার কোনো শর্ত প্রযোজ্য নয়। কেননা আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে প্রায় শতভাগই টিকার আওতায় চলে এসেছেন এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এখন বেশির ভাগই টিকা নিয়েছেন, তাই স্কুল-কলেজ খোলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তারাও টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে এবং টিকা নিতে পারবে। তাই এ দিক দিয়েও স্কুল-কলেজ খোলার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রোগ্রাম (কর্মসূচি) ঠিক করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয় থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠকে যুক্ত ছিলেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি নাÑ জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর আগে সচিব সভায় নির্দেশনা দিয়ে দেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে আজকেও কথা হয়েছে। তারা প্রোগ্রাম ঠিক করছেÑ কিভাবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া যায়। তবে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে ব্রিফ করে দেশবাসী ও আপনাদের সাংবাদিকদের জানাবেন।
Discussion about this post