নবাবগঞ্জের আয়ুব হোসেন চুন্নু মিয়া। কুয়েত প্রবাসী। ২০/২৫ বছর ধরে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন। গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি দেশে এসেছেন। আগামী ১৩ই আগস্টের মধ্যে তাকে কুয়েত যেতেই হবে। গত দুই মাস ধরে কর্মস্থল কুয়েতে ফেরার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু টিকা না দিতে পারায় যেতে পারছেন না তিনি। চলতি মাসের শুরুতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের টিকা দেয়ার ঘোষণা দেয় সরকার।
এমন ঘোষণায় খুশি হন তার মতো কর্মস্থলে ফিরতে ইচ্ছুক প্রবাসীরা। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয় টিকা নিতে প্রবাসীদের দুই ধাপে নিবন্ধন করতে হবে। ১লা জুলাই থেকে ৩রা জুলাই পর্যন্ত সরকারের ঘোষণা মতো আমি প্রবাসী অ্যাপসে বিএমইটি’র রেজিস্ট্রেশন করতে কয়েকশ বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। পরে প্রবাসীদের আন্দোলনের মুখে মন্ত্রণালয় সরাসরি নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে। এরপর ৪ঠা জুলাই ইস্কাটনে জেলা কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো অফিসে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে বিএমইটির নিবন্ধনের জন্য ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন চুন্নু মিয়া। অফিস থেকে তাকে বলা হয়েছিল ৩ দিন পর টিকার জন্য সুরক্ষা অ্যাপসে নিবন্ধন করতে। কিন্তু গত ৭ই জুলাই থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনি সুরক্ষা অ্যাপসে টিকার নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারেননি। সোমবার জেলা বিএমইটি অফিসে যোগাযোগ করলে তাকে বলা হয়, আপনার বিএমইটির নিবন্ধন হয়েছে। এখন আপনি সুরক্ষা অ্যাপসে নিবন্ধন করতে পারবেন। তাদের কথায় তিনি কিছুটা স্বস্তি পান। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তিনি টিকার নিবন্ধনই করতে পারেননি। কুয়েত প্রবাসী চুন্নু মিয়া মানবজমিনকে বলেন, আগামী ১৩ই আগস্টের মধ্যে কুয়েত যেতে না পারলে আমার অনেক বিপদ হবে। আরো আগেই যাওয়া দরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত টিকার নিবন্ধনই করতে পারলাম না। আমার এলাকার বড় ভাই ও ভাগ্নে আমার পরে বিএমইটির নিবন্ধন করেছেন। অথচ বুধবার তাদের ম্যাসেজ এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মিটফোর্ড হাসপাতালে তারা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমরা প্রবাসী। দেশে আসি কিছুদিরে জন্য বেড়াতে। কিন্তু দেশে আসার পর আমাদের নানা ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। সাধারণ একটা নিবন্ধন করতে এতো ঝামেলা। কুয়েতে এই কাজটি করতে ১ ঘণ্টা সময়ও লাগতো না। আর আমার প্রিয় বাংলাদেশে গত ১৫ দিনেও কাজটি করতে পারলাম না। বৃহস্পতিবার সাভার থেকে জেলা বিএমইটি অফিসে এসে ফের নিবন্ধন করার জন্য কাগজপত্র জমা দিলাম। জেলা বিএমইটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। জানিনা আসলে হবে।
জেলা বিএমইটি অফিসে কথা হয় অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আব্দুর রহমানের সঙ্গে। বিএমইটির রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে মহা বিড়ম্বনার কথা জানান। আব্দুর রহমান বলেন, তিনি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী নাগরিক। টিকার নিবন্ধন করতে প্রথমে আমি প্রবাসী অ্যাপসে চেষ্টা করি। কিন্তু ব্যর্থ হই। পরে ঢাকার বিএমইটি অফিসে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে ফরিদপুর জেলা বিএমইটি অফিসে যেতে বলেন। তাদের কথামতো ফরিদপুরে যাই। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর ওই অফিসের কর্মকর্তারা আমার কাছে ভিসার কপি চান। আমি তাদেরকে আমার পাসপোর্ট ও রেসিডেন্ট কপি দেই। তারা আমার কাছে আলাদা করে ভিসার কপি চান। তাদেরকে বুঝিয়ে বলি ইউরোপে আলাদা কোনো ভিসার কপি থাকে না। কিন্তু তারা বিষয়টি না বুঝে আমাকে ঢাকায় যোগাযোগ করতে বলেন।
দেশে ফেরা প্রবাসীদের টিকা নিতে এভাবে বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে হন্যে হয়ে ঘুরতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার বিক্ষোভও করতে হচ্ছে। গত ১লা জুলাই করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা না পেয়ে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বিক্ষোভ করেছেন প্রবাসীরা। বিক্ষোভকারীরা বলেন, আমরা টিকার জন্য দীর্ঘদিন আন্দোলন করে এলেও আমাদের টিকা দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির নতুন কর্মীরা টিকা রেজিস্ট্রেশন না করেই টিকা নিচ্ছেন। সেদিন পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ও সচিব বিক্ষোভকারীদের টিকাপ্রাপ্তি সহজলভ্য করার আশ্বাস দেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ সেদিন গণমাধ্যমকে জানান, সব প্রবাসী ও বিদেশগামীরা টিকা পাবেন তবে নিবন্ধন করে টিকা নিতে হবে। তিনি বলেন, প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় প্রয়োজন। ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করার অনুরোধ করছি। বিক্ষোভরত প্রবাসীদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানান মন্ত্রী।
১লা জুলাই কার্যক্রম শুরুর দিনে ফাইজারের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কেন্দ্রে। এরই মধ্যে গত বুধবার ফাইজারের টিকা দিতে না পেরে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে বিক্ষোভ করেছেন সৌদি আরব ও কুয়েত প্রবাসীরা। বিক্ষোভকারীরা টিকাদানে বিশৃঙ্খলা ও হয়রানির অভিযোগ করেন। ওই কেন্দ্রে প্রবাসীদের ফাইজারের টিকা দেয়ার কথা থাকলেও টিকা শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদের মডার্নার টিকা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। এতে প্রবাসীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় হাসপাতালের কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে প্রবাসীদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
Discussion about this post