জীবন জীবিকার তাগিদে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসেছিলেন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার নুর হোসেন (৫৩)। ২০০৭ সালে পরিবারের সুখের আশায় আমিরাতে এসে একটি কোম্পানিতে কাজ শুরু করলেও ২০১৫ সালে কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে নূর হোসেনের জীবনে নেমে আসে দুর্ভোগ। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে অবৈধ হওয়ায় কষ্টের জীবন শুরু হয় নূর হোসেনের। ৬ বছর আমিরাতে লুকিয়ে কাজ করতে হয় এই হতভাগা প্রবাসীকে। শেষ পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে তিনি হারালেন নিজের বাকশক্তি। এখন কথা বলেন ইশারা-ইঙ্গিতে। তার হয়ে কেউ পাশে না দাঁড়ালে নিজের মনের কথা অব্যক্তই থেকে যায় ক্যান্সার আক্রান্ত এ প্রবাসীর।
অসুস্থতা সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। কোনো উপায় না পেয়ে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যর্থ হয়ে যায় প্রথম দফায় দেশে ফেরার চেষ্টায় টিকিট করে বিমানবন্দর পৌঁছালেও পাসপোর্টে মেয়াদ না থাকায় সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয় তাকে।
ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের পরামর্শে আবুধাবি দূতাবাসের দ্বারস্থ হন নুর হোসেন। শুরু হয় নতুন করে তার দেশে ফেরার প্রক্রিয়া। দূতাবাস তার বহির্গমনের অনুমিতপত্র ইস্যু করে । নবায়ন হয় পাসপোর্ট। তাকে করে দেওয়া হয় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কার্ড। দূতাবাস কর্মকর্তাদের আর্থিক সহায়তায় রি-ইস্যু করা হয় প্লেনের টিকিট। সব প্রক্রিয়া শেষে অবশেষে সোমবার দেশে ফিরছেন ক্যান্সার আক্রান্ত নুর হোসেন।
বাকশক্তি হারানো নুর হোসেনের পক্ষে পুরো বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন আবুধাবি প্রবাসী সনজিত শীল। তিনি জানান, বর্তমানে নুর হোসেন কথা বলতে পারেন না। চিকিৎসার স্বার্থে তার কণ্ঠনালী কেটে ফেলা হয়েছে। ছয় মাস আগে তিনি অসুস্থ হয়ে গেলে স্থানীয় মাফরাক হাসপাতালে তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। সেখানে চিকিৎসকদের পরামর্শে তার কণ্ঠনালী কাটা হয়। এতে করে বেঁচে গেলেও বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন নুর হোসেন। এরমধ্যে দেশে যাবার জন্য চেষ্টা করলেও পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকায় তিনি প্রথমে যেতে পারেননি। তাকে নিয়ে দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে আন্তরিক সাড়া দেন কর্মকর্তারা। তাদের প্রচেষ্টায় এবার নুর হোসেনের দেশে ফেরার ব্যবস্থা হল।
আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) লুৎফুন নাহার নাজিম গণমাধ্যমকে বলেন, নুর হোসেনের কণ্ঠনালী কেটে ফেলায় তিনি ইশারায় কথা বলেন। গত ৪ জুন দেশে ফেরার জন্য এয়ারপোর্ট গেলে সেখান থেকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। দূতাবাসে যোগাযোগ করলে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তার দেশের ফেরার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি। চিকিৎসার জন্য সামান্য আর্থিক সহায়তাও দিয়েছি। পাশাপাশি তাকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কার্ডও করে দিয়েছি। এ কার্ড দিয়ে তিনি দেশে গিয়ে আর্থিক সহায়তা নিতে পারবেন।
লুৎফুন নাহার নাজিম আরও বলেন, সোমবারের ফ্লাইটে নুর হোসেন ছাড়াও দূতাবাসের সহায়তায় আল আইন হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকা গোলাম মাওলাও দেশে ফিরছেন। শুধু এ দুজনই নন, এ ফ্লাইটে আরও অন্তত ৮ থেকে ১০ জন অসহায় প্রবাসী দূতাবাসের মাধ্যমে দেশে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন।
Discussion about this post