বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা ফেনী। গত শতাব্দীর শেষ দিকে ফেনীর জেলা সদরে কালিদাস পাহালিয়া নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জামেয়া রশীদিয়া’ নামে একটি বহুমুখী ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র। ইসলামী আইনবিষয়ক বিখ্যাত গ্রন্থ আহসানুল ফতোয়ার সংকলক মুফতি রশিদ আহমাদ লুধিয়ানভী (রহ.)-এর স্নেহধন্য ছাত্র ও বিশিষ্ট খলিফা মুফতি শহিদুল্লাহ শিক্ষকের পরামর্শে ১৯৯৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। মাদরাসাটির সূচনা হয় একটি জীর্ণ মসজিদে অল্প কয়েকজন ছাত্র নিয়ে; কিন্তু মাত্র দুই যুগের ব্যবধানে এটি আজ দেশের অন্যতম বৃহত্তম ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ অবধি মুফতি শহিদুল্লাহ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন। মাদরাসা কমপ্লেক্সটি সাত একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। স্থানীয় দানবীর হাজী মোহাম্মদ আলী বিশাল এই শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। মাদরাসার শিক্ষক মুফতি সালমান ফারসি জানান, তাঁদের মাদরাসায় কওমি শিক্ষাকারিকুলাম অনুসারে পাঠদান করা হয়। কওমি শিক্ষা সিলেবাসের প্রাথমিক স্তর থেকে জামাতে হেদায়া পর্যন্ত ধারাবাহিক শ্রেণিগুলোর পাশাপাশি এখানে কিরাত, আদব ও ইফতা (ইসলামী আইন গবেষণা) বিভাগও রয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী এ মাদরাসায় ইসলামী জ্ঞান অর্জন করে। সর্বশেষ ১৪৪১-৪২ হিজরি শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক)-এর কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যও ঈর্ষণীয়। বেফাকে গোটা দেশে জামাতে শরহে বেকায়া শ্রেণিতে (উচ্চ মাধ্যমিক) এক শিক্ষার্থী প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
দ্বিনি শিক্ষার পাশাপাশি জামেয়া রশীদিয়ায় এখানে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের জন্য ‘কুল্লিয়াতে শারইয়্যাই’ (ইসলামী শরিয়তের আবশ্যকীয় বিষয়ে পাঠদান) এবং স্থানীয় সাধারণ মানুষের দ্বিনি শিক্ষারও বিশেষ ব্যবস্থা আছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ১৪০ জন শিক্ষক এবং অন্তত ২১ জন খাদিম ও কর্মচারী রয়েছে।
এ মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বাংলা ছাড়াও আরবি, উর্দু, ইংরেজি ও ফারসি ভাষা শেখার সুযোগ পায়। এখানে আবাসিক ব্যবস্থাপনায় এতিম ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে অথবা স্বল্প খরচে শিক্ষাগ্রহণের বিশেষ সুবিধা আছে। প্রতি রমজানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অন্তত পাঁচ শর বেশি মসজিদে জামেয়া রশীদিয়া থেকে হাফেজে কোরআন পাঠানো হয়। এসব হাফেজ বিনা পারিশ্রমিকে মসজিদগুলোতে খতম তারাবির নামাজের ইমামতি করেন।
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সামাজিক সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণেও বেশ অগ্রসর। সামাজিক কাজের সুবিধার্থে তারা প্রতিষ্ঠা করেছে ‘ইসলাহী ফাউন্ডেশন’। সমাজের অধিকারবঞ্চিত, শিক্ষাবহেলিত ও বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো এর মূল কাজ। পাশাপাশি জামেয়ার সব ছাত্রকে (নতুন, পুরনো ও শিক্ষাজীবন শেষ করা) এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার লক্ষ্যে ইসলাহী ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে। এই ফাউন্ডেশন কর্তৃক মাদরাসার গরিব, অসহায়দের সাহায্য করা হয় এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে মাদরাসা পরিচালকের নিয়মিত ইসলাহী বয়ান প্রকাশিত হয়।
পরিবেশ সংরক্ষণে জামেয়া রশীদিয়া দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আদর্শ। ফলদ ও বৃক্ষরোপণ ক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ২০০৯ সালের জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করে এবং পুরস্কৃত হয়। মাদরাসার ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সদস্য রয়েছে, যারা মাদরাসার উন্নতি-অগ্রগতির জন্য নিয়মিত দান-অনুদান করেন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ স্বপ্ন দেখে, একদিন জামেয়া রশীদিয়া দেশের অন্যতম ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্ররূপে সর্বমহলে প্রশংসিত হবে।
Discussion about this post