বিগত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত, দেশ-বিদেশে পলাতক এবং ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তরা কোনো পাসপোর্ট পাবেন না। এই তিন শ্রেণির লোকের পাসপোর্ট নবায়ন ও ইস্যু না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তাদের তালিকা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই চিঠি পাঠানোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এটা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটি সভার সিদ্ধান্ত।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ মে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ‘আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় ওই তিন শ্রেণির লোকের পাসপোর্ট নবায়ন ও ইস্যু না করার এ সিদ্ধান্ত আসে। এরপর এই তিন শ্রেণির লোকের তালিকা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে চিঠি ইস্যু করা হয়। গত ২২ মে এই চিঠি আইন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে এই তিন শ্রেণির লোকের তালিকা পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া তালিকা চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং সারা দেশের ডিসিদের কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছে।তালিকা চেয়ে পাঠানো চিঠির সঙ্গে গত ৪ মে অনুষ্ঠিত ওই সভার সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখার একটি চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘বিগত জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে পতিত সরকারের যেসব সহযোগী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা এড়িয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশে পলাতক রয়েছেন, সাম্প্রতিককালে সেসব পলাতক ব্যক্তি এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের পাসপোর্ট নবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছেন অথবা ভবিষ্যতে করতে পারেন মর্মে জানা যায়। এ ধরনের আবেদনের অনুমোদন প্রচলিত আইন, বিধিমালা এবং ন্যায়বিচারের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহের পরিপন্থি। উপরন্তু, এসব আবেদনের অনুমোদন দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুতর ঝুঁকি ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।চিঠিতে কোর কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নামের তালিকা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে এবং দেশ-বিদেশে পলাতক ও ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত অন্যদের নামের তালিকা আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সব দূতাবাস বা মিশনে পাঠিয়ে তাদের পাসপোর্ট নবায়ন রোধ বা বাতিল বা নতুন পাসপোর্ট প্রদান বন্ধ করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তালিকা চেয়ে ডিসিদের কাছে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, জেলা প্রশাসকদের কাছেও এ ধরনের লোকদের তালিকা থাকে। যাতে করে কেউ এড়িয়ে না যায়, সেজন্য ডিসিদের কাছেও তালিকা চাওয়া হয়েছে।এর আগে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ৩ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের পাসপোর্ট বাতিল ও অন্য কোনো দেশ ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপের বিষয়ে বলা হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হওয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই সংসদের কূটনৈতিক পাসপোর্টের প্রাধিকারভুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, চিফ হুইপ, সংসদ সদস্য, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, উপনেতা, উপদেষ্টা পদমর্যাদার ব্যক্তিদের অনুকূলে ইস্যুকৃত কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। ওই বাতিল পাসপোর্ট ব্যবহার করে যাতে কেউ বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বা বিদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে ভ্রমণ করতে না পারেন, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। তবে লাল পাসপোর্ট বাতিল ছাড়াও বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও বেশ কিছু পাসপোর্ট এরই মধ্যে বাতিল করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এবার পাসপোর্ট নবায়ন ও ইস্যু না করার জন্য নতুন এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Discussion about this post