গত ২১ মাসে জঙ্গলপথে ইটালি পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে অন্তত দেড়হাজার বাংলাদেশী মানব পাচারকারীদের ফাঁদে পড়ে।
কয়েকটি দেশের মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে প্রতি বছর আফ্রিকার লিবিয়া, ইউরোপ, আমেরিকাসহ যাওয়ার প্রলোভনের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশীরা।
এরমধ্যে কিছু মানুষ স্বপ্নের দেশে পা রাখতে পারলেও বাকিদের ভাগ্যে নেমে আসছে নির্মম নির্যাতন। তারপরও দেশ থেকে প্রতি বছরই শত শত মানুষ স্বপ্নের দেশগুলোতে পাড়ি জমাতে অবৈধ পথকেই বেছে নিচ্ছে।
এ সময় অনেকের স্বপ্ন পূরণের আগেই পথে অকাল মৃত্যু হচ্ছে। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের লাশও।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ও ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটের উদ্ধৃতি দিয়ে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, গত ২১ মাসে জঙ্গলপথে ইটালি পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে অন্তত দেড়হাজার বাংলাদেশী মানবপাচারকারীদের ফাঁদে পড়ে।
অভিবাসীদের নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রামরুর প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে জঙ্গলপথে মানবপাচারের বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার জঙ্গলে এবং পরিত্যক্ত ভবনে অভিবাসন প্রত্যাশী ৫০০ জন আটককৃতদের মধ্যে ৩০০ জনই ছিলেন বাংলাদেশী। জুলাইয়ে মেসিডোনিয়ায় গ্রিস সীমান্তের কাছে ট্রাক থেকে ২১১ জন অভিবাসীকে পুলিশ উদ্ধার করে যাদের মধ্যে ১৪৪ জনই বাংলাদেশী। একই বছরের সেপ্টেম্বরে স্লোভেনিয়াতে অবৈধভাবে প্রবেশের জন্য গ্রেফতারকৃত ১১৩ জন অভিবাসীর মধ্যে ৫২ জন ছিলেন বাংলাদেশী।
শুধু ইউরোপের দেশ ইটালিতে বাংলাদেশীদের পাচারের জন্য জঙ্গলের পথ ব্যবহৃত হচ্ছে তা কিন্তু নয়, আদম পাচারকারী চক্রের বিশাল নেটওয়ার্কের সদস্যরা ঢাকা-দুবাই-মিসর আকাশপথে নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে সড়ক পথে পাচার করছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ লিবিয়াতে।
পাচার হওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বন্দিশালায় রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং এসব ঘটনার ভিডিও ও কান্নার শব্দ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেশে অবস্থানরত পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়স্বজনকে শুনিয়ে চুক্তির টাকাসহ অতিরিক্ত অর্থ মুক্তিপণ হিসেবে নেয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেরও কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী মানবপাচার চক্রের সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত রয়েছেন।
অভিবাসন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডেস্ক ছাড়াও অন্যান্য বিভাগের দিকে কঠোর নজরদারি বাড়ানো সম্ভব হলে মানবপাচারের ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে।
Discussion about this post