আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) যাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। সোমবার রাজধানীর বকশীবাজারের আলীয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক সৈয়দা হোসনে আরা অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মাওলানা সাঈদীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু আদেশ দেন।
আদেশের পর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বলেন, এটি একটি মিথ্যা মামলা। আল্লাহর কোনো ভয় নেই। তাদের বিচার হবে। জাহান্নামে যেতে হবে। আমি খুবই কষ্টে আছি। আমার হার্টে পাঁচটি রিং পরানো। ৪০ বছর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ন্যায় বিচার করুণ। তা না হলে জাহান্নামে যেতেই হবে।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন জানান, আদালতের আনুমতি নিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মাওলানা সাঈদী আইনজীবী ও পুলিশের উপস্থিতিতে এসব কথা বলেন।
এর আগে মাওলানা সাঈদী ও অন্যান্য আসামিদের পক্ষে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। একই সাথে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেন।
সোমবার সকাল ১০টায় মাওলানা সাঈদীকে কাশিমপুর কারাগার থেকে বকশীবাজারের আলীয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত আদালতে আনা হয়। আদালতের কার্যক্রম শেষে বেলা ১টা ২০ মিনিটে তাকে আবার কারাগারে নেয়া হয়। মানোবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড হওয়ার পর থেকে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এখন কাশিমপুর কারাগারে আছেন।
আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন জানান, অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদনের শুনানিতে আমরা বলেছি ইসলামী সমাজ কল্যাণ কেন্দ্র সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেন। এই টাকা তিনি তৎকালীন ইসলামী ফাউন্ডেশন পিরোজপুরের উপ-পরিচালক ও পিরোজপুরের যাকাত বোর্ডের সদস্য সচিব মো. ওয়াজেদ আলীর উপস্থিতিতে ১০০ জনকে ৫ হাজার টাকা করে প্রদান করেন। এই টাকা গ্রহণ ও বিতরণে মাওলানা সাঈদীর কোনো ভূমিকা ছিল না। মো: ওয়াজেদ আলী প্রসিকিউশনের একজন সাক্ষী। তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দীতে মাওলানা সাঈদী সাহেবের নামও উল্লেখ করেননি।
আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুস সোবহান তরফদার ও মুহা. মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন দুদকের পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল ।
মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ এ মামলায় মোট ছয়জন আসামি। অপর পাঁচ আসামি হলেন- ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুল হক, মসজিদ কাউন্সিল ফর কমিউনিটি অ্যাডভান্সমেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, বন্ধুজন পরিষদের প্রধান সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস, ইসলামী সমাজ কল্যাণ কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল হক।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সংস্থাটির সাবেক পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আইয়ুব আলী চৌধুরী ২০১০ সালের ২৪ মে শেরে বাংলা নগর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
Discussion about this post