রুম্পা বেগমের স্বামীর কাছে এক হাজার টাকা পেতেন টাঙ্গাইলের আলী হোসেন। সেই টাকা চাইতে বাসায় গেলে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার জেরে আলী হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন রুম্পা। পরে আসামির পরিবারের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে এ ঘটনায় আপস-মীমাংসা করেন বলে হাইকোর্টকে জানান বাদী। এ শুনে বাদীর বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
জামিন আবেদনে বাদীর দাখিল করা অঙ্গীকারনামায় ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় ওই বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদেশের বিষয়টি মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) জাগো নিউজকে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আদেশে আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পরও ওই ঘটনায় আপস করায় ধর্ষণ মামলার বাদীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আলী হোসেনের আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কেএম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম এবং আসামি পক্ষে মো. মজনু মোল্লা শুনানি করেন।
মনিরুল ইসলাম জানান, আদালত বলেছেন, বিদ্যমান আইনে এ ধরনের গুরুতর অপরাধের মামলা আপস-মীমাংসার সুযোগ নেই। তার পরও আপস করার বিষয়টি যেহেতু অ্যাফিডেভিট (হলফনামা) করা, তাই এমন ঘটনায় আপসের বিষয়ে তদন্ত করে সত্যতা পেলে ওই নারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আদালত।
মামলার নথির বরাত দিয়ে তিনি জানান, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের রুম্পা বেগম গত ২৬ অক্টোবর স্থানীয় মুদি দোকানি আলী হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। এরপর থেকেই আলী হোসেন কারাগারে। পরে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন আলী হোসেন। ওই আবেদন শুনানিতে রুম্পা বেগমের সঙ্গে আপস করার হলফনামা সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টে জমা দেন আসামিপক্ষ। হলফনামায় রুম্পা বেগম জানান, মামলাটি ছিল মিথ্যা। তারপরও আসামির পরিবারের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে আপস করেন তিনি।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গত ৮ ডিসেম্বর আলী হোসেনের পরিবারের সঙ্গে রুম্পা বেগমের সমঝোতা হয়েছে। আপসনামায় বলা হয়, মুদি দোকানি আলী হোসেন পাওনা ১ হাজার টাকার জন্য রুম্পা বেগমের বাসায় এলে তার (রুম্পা) স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয়। এরপর রুম্পাকে তার স্বামীই ধর্ষণ মামলা করতে বাধ্য করেন। পরে স্থানীয় মাতবরদের নিয়ে ২৫ হাজার টাকায় আপস করেন তারা, যা শুনে হাইকোর্ট বিস্মিত। সব শুনে আদালত আলী হোসেনকে জামিন দেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে মিথ্যা মামলা করায় রুম্পা বেগমের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, মিথ্যা মামলা বন্ধে এটি একটি দৃষ্টান্তমূলক আদেশ, যা নারী ও শিশু নির্যাতনের মিথ্যা মামলা কমাতে ভূমিকা রাখবে।
২৫ হাজার টাকায় আপস করায় বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়ার প্রসঙ্গ কেন আসলো, এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবীরা বলেন, গত ২২ অক্টোবর টাঙ্গাইলের সারুটিয়ায় ভাড়া বাসায় রাত ৮টার দিকে ‘ধর্ষণের শিকার’ হন রুম্পা বেগম। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় আলী হোসেনের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেন তিনি।
রুম্পা বেগম মামলার এজাহারে বলেন, ‘বাসা পরিবর্তনের সময় আমার স্বামীকে এক হাজার টাকা ধার দেয় আসামি। এই টাকা নেয়ার জন্য আসামি বিভিন্ন সময় বাসায় আসত। আমার স্বামী বাসায় না থাকার সুযোগে সে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।’
গত ৮ ডিসেম্বর আসামির পরিবারের সঙ্গে ২৫ হাজার টাকায় আপস করে হলফনামা দেন বাদী। সেখানে তিনি বলেন, ‘আলী হোসেন পাওনা এক হাজার টাকার জন্য ভাড়া বাসায় আসলে আমার স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয়। যার সূত্র ধরে তার বিরুদ্ধে স্বামীর কথায় বাধ্য হয়ে মিথ্যা মামলা করি। পরে স্থানীয় মাতব্বর, ব্যক্তি এবং আইনজীবীর পরামর্শে মামলাটি আপস-মীমাংসা করি। এই আপসের কারণে আসামিপক্ষ আমাকে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করে। আসামির বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। অঙ্গীকারনামামূলে মামলাটি নিষ্পত্তি হলে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না।’
এদিকে এর আগে নিজের মেয়ে আত্মহত্যা করার পরও মেয়ের জামাইয়ের নামে মিথ্যা মামলা করায় হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ ‘মিথ্যা মামলা করে আদালতের সময় নষ্ট’ করার কারণে পটুয়াখালীর ওই ব্যক্তির শ্বশুরের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেন।
২০১৯ সালে মেয়ে হত্যার অভিযোগে জামাতা মো. কাওসার গাজীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পটুয়াখালীর আব্দুল জলিল দুয়ারী। মামলার কয়েক মাস পরই তিনিই আবার পটুয়াখালী আদালতে মেয়ে আত্মহত্যা করেছে মর্মে হলফনামা দাখিল করেন।
এরপর হাইকোর্টে মেরের স্বামী জামিন আবেদন করেন। আদালত ওই আবেদন শুনানি করে আসামি কাওসার গাজীকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আদেশ দেন। একই সঙ্গে হাইকোর্ট শ্বশুর জলিলের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় মামলা করতে পটুয়াখালীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। গত ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
Discussion about this post