নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রকাশ করা হয়েছে তা অপসারণ করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসিকে) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে ভিডিওটি পেনড্রাইভ বা সিডিতে সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া এ ঘটনায় করা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্যাতিত নারী ও তার পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
একইসঙ্গে ওই নারীর নিরাপত্তা, জবানবন্দি নেওয়া, দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ সার্বিক ঘটনায় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো অবহেলা আছে কি না তা অনুসন্ধানে নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। জেলার সমাজ সেবা কর্মকর্তা ও চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।
সোমবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন।
এর আগে সকালে ওই নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলা আছে কি না এবং ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণে বিটিআরসিকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সোমবার সকালে আদালতের কাছে আরজি জানান আইনজীবী মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।
আদালত তাকে লিখিত আবেদন নিয়ে আসতে বলে বেলা আড়াইটায় শুনানির জন্য রাখেন। দুপুরে শুনানি নিয়ে আদালত এই আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ঘরে ঢুকে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে একদল যুবক। মোবাইল ফোনে সেই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে তারা। নির্যাতনের পর গৃহবধূ ও তার পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।
ঘটনার এক মাস পর রোববার দুপুরে নির্যাতনের ওই ভিডিও কেউ একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন। মুহূর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে (ভাইরাল) পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশও তৎপর হয়ে ওঠে। পুলিশ জানতে পারে, স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বাদল এবং কর্মী রহিম, সুমনসহ পাঁচ-ছয়জন গৃহবধূর সঙ্গে এমন বর্বর আচরণ করেছে। পরে অভিযান চালিয়ে সন্ধ্যায় আবদুর রহিম নামের একজনকে আটক করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই গৃহবধূর বিয়ে হয় বছর তিনেক আগে। স্বামী তাকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করতে থাকে। দীর্ঘদিন স্বামীর কোনো যোগাযোগ ছিল না। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে স্বামী তার সঙ্গে দেখা করতে আসে। মাদক ব্যবসায়ী দেলোয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তার লোকজন নিয়ে রাত ১০টার দিকে গৃহবধূর ঘরে প্রবেশ করে ‘অনৈতিক’ কাজের অভিযোগ এনে তাকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে তারা।
এক মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেকেই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।


























