স্বাধীনতা-পরবর্তী গত প্রায় পাঁচ দশকে বাংলাদেশের বড় অর্জন অনেক। সেই তালিকায় পোশাকশিল্পের উত্থান, ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানো ইত্যাদির সঙ্গে সামনে থাকতে পারে বিভিন্ন দেশে কোটির বেশি মানুষের আয়-রোজগারে যুক্ত হওয়ার বিষয়। এই তিন অর্জনের প্রথম দুটিতে উত্থান-পতন আছে। কিন্তু প্রবাসী শ্রমজীবীদের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের ভরসা বেশ টেকসই।
বিশ্বে ১৩০টির মতো দেশ আছে, যেখানে পুরো জনসংখ্যাই কোটির কম। আর বাংলাদেশের এক কোটির বেশি মানুষ বিদেশে নিয়মিত আয় করছেন। প্রবাসে কর্মজীবী মানুষের বৈশ্বিক হিসাবে বাংলাদেশ প্রথম পাঁচ-ছয়টি দেশের মধ্যেই আছে। এ দেশের দুর্দমনীয় তরুণদের বড় এক অর্জন এটা। কিন্তু এই তারুণ্যকে রাষ্ট্র কী দিয়েছে? সেই হিসাব করার বোধ হয় সময় হয়েছে এবার।
প্রবাসীদের কষ্ট গভীর অনুসন্ধান দাবি করে
কোভিড-১৯ প্রবাসীদের প্রতি বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রের মনোভাব বিশেষভাবে উদোম করে দিয়েছে। আমরা এত দিন তাঁদের সোনার হাঁস বলেছি। বেশি বেশি ডলার পাঠাতে উৎসাহ জুগিয়েছি। প্রেরিত অর্থে ২ শতাংশ প্রণোদনার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু মহামারির সময় বাড়িতে ‘লাল পতাকা’ টাঙিয়ে বিব্রত করতেও থামিনি। করোনার শুরুতে প্রবাস থেকে আসা অনেকে এলাকায় বাড়তি চাঁদাবাজিরও শিকার হয়েছেন।
সম্প্রতি ভিয়েতনামফেরত প্রবাসী শ্রমিকেরা যে অবস্থায় পড়েছেন, সেটা আরও নির্মম। বিদেশে প্রতারিত হয়ে নিজ দেশের দূতাবাসে সাহায্যপ্রার্থী হতে গিয়ে ওই শ্রমজীবীদের ঠাঁই হয়েছে শেষ পর্যন্ত দেশের কারাগারে। কেবল ভিয়েতনামফেরত ব্যক্তিরাই নন, জুলাইয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে কঠোর হেনস্তার মুখে পড়েছেন। বলা হচ্ছে, এই প্রবাসীরা দেশের ‘ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ন করেছেন। কিন্তু জায়গাজমি বেঁচে, নিকটজনদের ছেড়ে বিদেশে গিয়ে কেন, কীভাবে, কী অবস্থায় যুবকেরা দেশের ভাবমূর্তি মলিন করছেন, তার বিস্তারিত জানা যাচ্ছে না। জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর ছাড়পত্র নিয়েই তাঁরা বিদেশে যান। এই ছাড়পত্র দেওয়ার আগে যে কোম্পানির কাজ নিয়ে তাঁরা যাচ্ছেন, সেখানে কি খোঁজ নেওয়া হয়? ওই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের মতামত নেওয়া হয় কি তখন? এসব নিয়ে গভীর অনুসন্ধান সময়ের দাবি।
ফিরে আসা শ্রমিকেরা মানসিক চাপে
প্রচারমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী করোনা এ পর্যন্ত প্রবাসে কাজ করতে চাওয়া প্রায় চার লাখ যুবককে মুশকিলে ফেলেছে। করোনার শুরুতে ছুটিতে আসা দুই লাখ লকডাউনে আটকা পড়েন। সব প্রস্তুতি থাকার পরও কাজ জোগাড় করা এক লাখ কর্মস্থলে যেতে পারেননি। এপ্রিল থেকে পরের পাঁচ মাসে ফিরে এসেছেন আরও এক লাখ। প্রতিদিন ফিরে আসা মানুষের প্রবাহ বাড়ছে। ২ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর প্রতিবেদনে সংখ্যাটা বলা হয়েছে দৈনিক দুই হাজার। তাঁদের মধ্যে ৬-৭ শতাংশ আছেন নারী শ্রমিক।
সংকটের আরও করুণ দিকও আছে। ব্র্যাকের হিসাবে ৫ জুলাই পর্যন্ত করোনায় বিদেশের মাটিতে অন্তত ১৯ দেশে ১ হাজার ৩৭৭ জন প্রবাসী মারা গেছেন। আক্রান্তের সংখ্যা ৬০-৭০ হাজার। আক্রান্ত হওয়া কিংবা মারা যাওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তাঁরা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে গেছে। এই মানুষদের জন্য, তাঁদের পরিবারের জন্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কিছু করার দায় আছে বৈকি। দায় আছে সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসা ব্যক্তিদের জন্যও।
করোনার ‘নেগেটিভ’ সনদ না থাকলে ফিরে আসা এই ব্যক্তিদের থাকতে হচ্ছে সরকারি কোয়ারেন্টিনে। তারপর কেউ বাড়ি ফিরছেন। কেউ আটক ভাবমূর্তির মামলায়। ফিরে আসা ব্যক্তিদের অনেকে লকডাউনকালে বিভিন্ন দেশে ‘অবৈধ’ হয়ে আটকাবস্থায় পড়েন। সেই সংকট থেকে ফিরে এসে দেশে পড়েছেন বেকারত্বে। ব্র্যাক, আইওএম, রামরু ইত্যাদি সংস্থার গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ফেরত তরুণ-তরুণীদের ৭০-৮০ ভাগ প্রচণ্ড হতাশা, দুশ্চিন্তা আর জীবিকাসংকটে এখন। কেবল কিছু ঋণের প্রস্তাবে এই সংকটমুক্তি সম্ভব নয়।
প্রবাসীদের অর্থে কয়েক কোটি মানুষের সচ্ছলতা
ভয়াবহ মহামারির মধ্যেও জুন-জুলাইয়ে প্রবাসীরা গড়ে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার করে মুদ্রা পাঠিয়েছেন দেশে। ২০১৯-এ তাঁদের পাঠানো মুদ্রার পরিমাণ ছিল ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আগের অর্থবছর ছিল প্রায় সাড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার। এই অর্থে প্রবাসীদের পরিবারগুলোই কেবল উপকৃত হয়নি, বৈদেশিক মুদ্রার শক্তিশালী রিজার্ভ অর্থনীতিরও বড় ভরসা। দেশের জাতীয় আয়ে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের অবদান প্রায় ৬ শতাংশ। পারিবারিক লোকসংখ্যার হিসাবে প্রবাসী আয়ের সরাসরি সুবিধাভোগী দেশে চার-পাঁচ কোটি মানুষ।
লাখ লাখ পরিবারের প্রতি মাসের প্রধান ভরসা বিদেশে থাকা মানুষটির অর্থ। এই টাকা না পেলে তারা সব স্বস্তি হারাবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এ রকম পরিবারের প্রায় ৫৭ ভাগের আয়ের একমাত্র উৎস বিদেশে থাকা মানুষটির টাকা।
এই পরিবারগুলোকে সরকার যে কাগজপত্রে সচ্ছল হিসেবে দেখাতে পারছে, সেটা কিন্তু ওই পরিবারের বিদেশে থাকা মানুষটির ফোঁটা ফোঁটা ঘামে। একই ঘামে ভেজা পথে আমদানি ব্যয় মেটানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ আজ উদ্বেগহীন। তাঁদের জন্য আমরা কী করছি? তাঁদের আজ ও আগামীকাল নিয়ে আমাদের সুদূরপ্রসারী ভাবনা কী?
এ বিষয়ে ভারত-পাকিস্তানের তৎপরতা লক্ষ করার মতো। মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে উভয়ে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রবাসীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়াতে ভারত বছরে এক দিন ‘প্রবাসী দিবস’ পালন করছে। বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের সমস্যা-সংকট নিয়ে দূতাবাসগুলোর সমন্বয়ে তারা অতি মনোযোগী। এভাবে এ খাতের আয় ৮০ বিলিয়ন থেকে ওপরে ওঠাতে মরিয়া দেশটি।
ভারতের লক্ষ্য কেবল ডলার নয়, বৈশ্বিক প্রভাব বাড়াতে দেশে দেশে নিজেদের কর্মজীবীদেরও কাজে লাগাতে চায় তারা। এ খাতের প্রতি পাকিস্তানের ইমরান সরকারেরও অগ্রাধিকারমূলক নজর। করোনাকালে কাজ হারানো প্রবাসীদের চাকরি খুঁজে দেওয়াসহ বিভিন্ন সহায়তা দিতে তারা অনলাইনে ‘জব-পোর্টাল’ খুলে বিদেশে বেকার হওয়া ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনা ইমরান খানের আরেক অঙ্গীকার। সেটা হলে রাজনৈতিক পরিসরে প্রবাসীদের কণ্ঠ জোরালো হবে।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে প্রবাসীদের স্বার্থের বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে রাজনীতির পরিসরে তাঁদের অংশগ্রহণ বাড়ানো দরকার। সে জন্য ভোটাধিকারের সহজ ও পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা ভালো বিকল্প। বাংলাদেশের প্রবাসীদের কাছেও এটা জনপ্রিয় দাবি।
আন্তর্জাতিকভাবেই মহামারির সবচেয়ে বড় ছোবল পড়েছে সব দেশের প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর। শ্রমিকের দায়িত্ব ঠেলে দিচ্ছে উৎস দেশের ওপর। এ অবস্থায় প্রবাসীদের জন্য আন্তর্জাতিক আইনের সুবিধাগুলো কাজে লাগাতে ভারত-পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে তৎপর হতে পারে বাংলাদেশ। অনেক আন্তর্জাতিক আইন এ রকম তৎপরতার রক্ষাকবচ হিসেবে আছে।
প্রতারিতেরা কারাগারে, প্রতারকেরা মুক্ত’
সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, প্রবাসীদের এক বড় সমস্যা চিকিৎসাসুবিধার সংকট। প্রচুর পরিশ্রম, নিকটজন থেকে বিচ্ছিন্নতা এবং মানসিক চাপ অনেককে কমবেশি অসুস্থ করে ফেলে। দেশে টাকা পাঠানোর তাগাদার কারণে এই অসুস্থতা নিয়েই মানুষগুলো কাজ করে চলেন। এভাবে বেশি দিন বাঁচা কঠিন। তাই প্রবাসীদের মধ্যে মৃত্যুহার অত্যধিক। ২০১৯-এ ৩ হাজার ৬৫৮ জন প্রবাসীর লাশ এসেছে। অর্থাৎ দিনে প্রায় ১০ জন। গত দশকে এই সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার।
এর বাইরে অনেকে অসুস্থ হয়ে দেশে ফিরছেন। এই অসুস্থ ও সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসা সব প্রবাসীর জন্য সব বিভাগে বিশেষায়িত হাসপাতাল খুব প্রয়োজন। প্রবাসীদের কাছে এটাও জনপ্রিয় দাবি। অর্থনীতিতে প্রবাসীদের যে অবদান, সেই তুলনায় এই দাবি বাস্তবায়ন সামান্য বিনিয়োগ। করোনা এসব বিনিয়োগের প্রয়োজনকে সামনে এনেছে।
মহামারির আগে বছরে ছয়-সাত লাখ বাংলাদেশি কাজ নিয়ে বিদেশে যেতেন। সেটা এখন স্থবির। ভবিষ্যতে সচল হলেও বিশ্ব অর্থনীতি বলছে, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার চাঙা হতে সময় লাগবে। তেলের মূল্য পড়তির দিকে থাকায় মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজার সংকোচনের শঙ্কা আছে। ফলে প্রবাসীদের কাজ ও পুনর্বাসনে বিকল্প উদ্যোগ দরকার। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা মানুষদের মধ্যে বিশেষ বিশেষ কাজে দক্ষতা তৈরি হয়। সেই দক্ষতার সঙ্গে পুঁজি সহায়তা পেলে দেশে এসেও তাঁরা জাতীয় অর্থনীতির সম্পদ হতে পারেন। এই বিবেচনা থেকেই তাঁদের জন্য কিছু আঞ্চলিক শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার দাবি উঠেছে। বহু বছরের দক্ষতায় সমৃদ্ধ ফেরত আসা প্রবাসীদের জড়ো করে ‘কনসালট্যান্ট পুল’ করারও সুযোগ আছে। তবে সবকিছুর আগে দরকার হেনস্তা বন্ধ করা।
প্রবাসী কর্মজীবীদের হেনস্তার বড় কারণ দালালেরা। ভিয়েতনামফেরত শ্রমিকদের সর্বশেষ নাজেহাল অবস্থাও ওই রকম দালালদের কারণে। যে কাজের কথা বলে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই কাজ দেওয়া হয়নি। অথচ যাওয়ার আগেই জনপ্রতি চার লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। এ রকম প্রতারণা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটে। কিন্তু প্রতারিত ব্যক্তিরা কারাগারে আটক হন, প্রতারকেরা থাকে মুক্ত। যাঁরা মানব পাচারের শিকার হচ্ছেন, তাঁদেরই আমরা অপরাধী সাব্যস্ত করছি। তাতে মূল অপরাধীরা তৎপরতা চালু রাখতে পারছে। এর প্রতিকার সম্ভব এই খাতের প্রকৃত বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সরকারের সম্মিলিত নজরদারিতে।
এটা বিশেষভাবে দরকার নারী পাচার বন্ধে এবং বিদেশে নারী শ্রমজীবীদের হয়রানি কমাতে। কোভিডকালে বিদেশে থাকা নারী গৃহকর্মীরা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। নির্যাতন ও যৌন হয়রানির পুরোনো সমস্যাগুলো তো রয়েছেই।
যারা জনশক্তি রপ্তানি করছে, তাদের সহযোগিতা ছাড়া এসব সংকট সরকার একা মোকাবিলা করতে পারবে না। কিন্তু সহযোগিতা পাওয়া যাবে আইনগত বাধ্যবাধকতার মধ্যেই। দশকের পর দশকের অভিজ্ঞতায় স্পষ্ট জনশক্তি রপ্তানি খাতে সুশাসনের সংকট তীব্র। ফলে এই খাতের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জবাবদিহির কাঠামোগত ব্যবস্থা আরও সুদৃঢ় করা চাই।
প্রবাসীদের স্বার্থ দূতাবাসে অগ্রাধিকারমূলক বিষয় হওয়া দরকার
যাঁরা প্রবাসে, তাঁদের ৯০ ভাগই দেশে ন্যায্য মজুরিতে শোভন কাজ পেলে বিদেশে যেতেন না। দেশে কর্মসংস্থানের সংকটেই তাঁরা পরিবার-পরিজন ছেড়ে বিপুল টাকা খরচ করে অজানার পথে পাড়ি জমান। ঝুঁকি নেন। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই প্রায় দুই দশক আগে শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে সৃষ্টি হয় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রবাসীদের কর্মক্ষেত্রের ধরন এমন যে কেবল প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের নিরাপদ বিদেশজীবন নিশ্চিত করতে পারবে না। এ জন্য বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর সঙ্গে তাঁদের গভীর ও সার্বক্ষণিক সমন্বয় প্রয়োজন। দূতাবাসগুলোতে তাই এটা অগ্রাধিকারমূলক বিষয় হিসেবে থাকতে হবে। যে খাত দেশের প্রধান ভরসা, তার পরিচর্যার বাইরে জাতীয় কর্তব্য আর কী হতে পারে?
বিশ্ব অর্থনীতির অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতের মতো শ্রমবাজার ও শ্রম অর্থনীতি সদা পরিবর্তনশীল। আঞ্চলিক ভূরাজনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির সঙ্গে এই বাজারের ভাগ্য জড়িয়ে থাকে। সে জন্য আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের গতিপ্রকৃতিতে সার্বক্ষণিক নজর রাখা এবং দেশের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে তার সার্বক্ষণিক সমন্বয় জরুরি। আমাদের শ্রম অর্থনীতির প্রধান ভরকেন্দ্র মধ্যপ্রাচ্য। সেখানে শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক ভাঙাগড়া। ইরান, তুরস্ক, কাতার ও সৌদি আরবের মধ্যে যে চতুর্মুখী টানাপোড়েন চলছে, তাতে সতর্ক নজরদারি প্রয়োজন। প্রবাসীদের স্বার্থকে কেন্দ্রে রেখে এবং ভবিষ্যৎ শ্রমবাজারের সম্ভাবনাকে বিবেচনায় রেখেই এসব ক্ষেত্রে চটজলদি পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রবাসীদের প্রতিদানের সময় এসেছে
করোনার আগে গড়ে দুই হাজার বাংলাদেশি বিদেশে যেতেন কাজের সূত্রে। আবার কবে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে, সেটা অনিশ্চিত। কিন্তু ইতিমধ্যে যেসব প্রবাসী মহামারির সঙ্গে যুদ্ধ করে বিদেশে টিকে আছেন এবং যাঁরা দেশে ফিরতে বাধ্য হলেন, উভয়ে সরকারের মদদ প্রত্যাশা করছেন। এই মদদ দরকার ডলার সংগ্রহের জাতীয় আনন্দকে টেকসই করার লক্ষ্যেও। তবে প্রবাসী শ্রমিকদের বিষয়ে প্রথম সিদ্ধান্ত হতে হবে তাঁদের আমরা ‘নায়ক’ না ‘খলনায়ক’ হিসেবে দেখব। নায়ক হিসেবে দেখলে লাল পতাকা নয়, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে সবুজ পতাকা নিয়ে।
আলতাফ পারভেজ: গবেষক
প্রথম আলো
Discussion about this post