কাউছার নাজ নাসের: ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট! প্রতিদিনের মত আব্বু সকালে ইউনিয়ন পরিষদ ও চকরিয়া থানায় জনহিতকর কার্যে বেরিয়ে পড়েন। প্রায় সময় ফিরতে ফিরতে ১/২ টা বা কখনো কখনো ৩টা ও বেজে যেত। সেই দিন দেখি কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে এসেছেন। সেইদিন প্রথম বারই দেখি আব্বুর চোখে জল। খুবই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে দেখেছি। মুহুর্তেই আমাদের পুরো পরিবার হতবিহ্বল হয়ে কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে শোকে স্তব্ধ ! কিছু সময় পর আব্বু চকরিয়া থানায় গিয়ে, জাতীয় পতাকা অর্ধ নির্মিত করেন, চকরিয়া ও জেলা পর্যায়ের নেতা ও সহপাঠীদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন।
বলে রাখি, ঐ সময়ে আমার আব্বু ছিলেন চকরিয়া থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি, ফাসিয়া খালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও মহান মুক্তি যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা,বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন একনিষ্ঠ অনুসারী।
তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর। তারপরও আমার অনেক কিছু স্পষ্ট মনে আছে। আমাদের বাড়িতে অনেক সময় আব্বু সহপাঠীদের নিয়ে মতবিনিময় ও মিটিং করতেন, তাতেই বুঝতে পারতাম বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীন বাংলার স্থপতি, তিনিই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান ২৩টি বছর নানান সময়ে আন্দোলন করে, কারা বরন করেন, জেল জুলুমকে পরোয়া না করে বাঙালির চির আকাংকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, এটা তো কোন মানুষই মেনে নিতে পারেনা। সেই হত্যার মিছিলে ছিল, নিরহ, নিরপরাধ মহিলা, শিশু, গর্ভবতী নারী, গৃহকর্মী থেকে শুরু করে নিঃপাপ শিশু।
এ যেন কারবালার পুনরাবৃত্তি! জিয়াদের বংশধর বংশধর এজিদ সীমার যেমন মুসলমান হয়ে শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর প্রিয় দৌহিত্রের বংশধর কে নিঃশেষ করে দিয়েছিল, হৃদয়হীন পাষাণের মত আচরণ করেছিল, ঠিক তেমনই ১৫ ই আগস্টের খুনীরাও পৃথিবীর সমস্ত বর্বরতা কে ম্লান করে দিয়ে শিশুদের আকুতিকেও তোয়াক্কা না করে, নির্বিচারে গনহত্যা চালিয়েছিল। যে মানুষটিকে পাকিস্তানীরা পর্যন্ত হত্যা করতে সাহস পায় নাই, সেই বঙ্গবন্ধুকে কিছু মীর জাফর, হায়না, অমানুষ, হিংস্র জানোয়াররা, বঙ্গবন্ধুর মত মানুষকে হত্যা করেছে।
যে মানুষটির চিন্তা, চেতনা, স্বপ্ন, ভাবনা, হৃদয় জুড়ে ছিল, বাঙালি ও বাংলাদেশ সেই মানুষকে কীভাবে শিশু সন্তানসহ সপরিবারের সবাইকে হত্যা করতে পারে। খুনীরা কি কখনো মানুষের পর্যায়ে পড়ে! শুধু কী তাই যেন এই হত্যার বিচার না হয়, অবৈধভাবে কালো আইন করে এই হত্যার বিচার কার্য না হয়! তাছাড়া এই খুনীদের কে বিভিন্ন দুতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃতও করা হয়েছে। দীর্ঘ একুশ বছর কোথাও কোনখানে বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া যেত না। এমন কী বই পুস্তক থেকে বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে মনগড়া বিকৃত ইতিহাসে ভরে গিয়েছিল। একটি কথা বলে রাখি কালের পরিক্রমায় মিথ্যা হারিয়ে যায়, সত্য অমরতা লাভ করবে। ইতিহাস কখনো মিথ্যাবাদী ও বিকৃত ইতিহাসকারীকে ক্ষমা করবে না। শতবছর পর হলেও একদিন না একদিন সত্যি ইতিহাস প্রকাশিত হবে।
১৭ই মার্চ’২০ ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শত বার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সাল সারা বছর জুড়েই ছিল বিভিন্ন কর্মসুচী। মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে, উৎসব মুখরভাবে পালন করতে না পারলেও বাঙালির হৃদয় জুড়ে আছ বঙ্গবন্ধু তুমি। সারা পৃথিবী থেকে স্বীকৃতি পেয়েছ তুমি একজন মানবিক, হৃদয় বান মহানুভব মহান নেতা।
মহররম যেমন সারা মুসলিম জাহানের জন্য শোকের মাস ঠিক তেমনই, আগষ্ট বাঙালি জাতির জন্য শোকের মাস। কারন আগষ্ট’ই হারিয়েছি আমরা বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, বিশ্ববাসী হারিয়েছে এক মহান নেতাকে, বাঙালি জাতি ও বিশ্ব বাসী আজ বিনম্র শ্রদ্ধা চিত্তে তোমায়, স্মরণ করছি ও মাগফেরাত কামনা করছি।
কাউছার নাজ নাসের,
সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ইউ এ ই।
সভাপতি, বঙ্গবন্ধু মহিলা পরিষদ ইউ এ ই।
Discussion about this post