গোলাম হোসেন। পেশায় একজন আবাসন ব্যবসায়ী। বুধবার পাঁচলাইশ এলাকার একটি ওষুধের দোকান থেকে এক কেজি ওজনের ‘স্যাভলন’ ব্র্যান্ডের তরল জীবাণুনাশক কেনেন। বাসায় গিয়ে দেখেন এটি স্যাভলন নয়, ‘স্যালভন’।
পরে ওষুধের দোকানে গিয়ে ফেরত দিয়ে আসেন। এভাবেই চট্টগ্রামে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নকল জীবাণুনাশক ও নিুমানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী। অভিযান চালিয়েও এই অসাধু ব্যবসায়ীদের ঠেকানো যাচ্ছে না।
একইভাবে নকল মাস্ক ও পিপিইসহ সব ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীতে বাজার সয়লাব। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক নানা সামগ্রী।
ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নকল ও ভেজাল সামগ্রী। ভেজাল স্বাস্থ্য সামগ্রী উৎপাদনকারী কয়েকটি কারখানায় অভিযানের পরও বাজারে নকল জীবাণুনাশক সামগ্রী বিক্রির প্রমাণ পেয়েছে প্রশাসন, র্যাব ও পুলিশ।
এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, নকল স্যানিটাইজার ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব ক্ষতিকর স্যানিটাইজার বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে জীবাণুমুক্ত হওয়া যায় না বরং আরও ক্ষতি করে। ক্ষতিকর নকল স্যানিটাইজার শুধু নগরীতে নয়, ছড়িয়ে গেছে বিভিন্ন উপজেলায়ও।
চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসন, র্যাব ও পুলিশ একাধিক অভিযান চালিয়ে বেশ ক’জনকে গ্রেফতার করেছে। গত সপ্তাহে নগরীর পাথরঘাটা রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ড্রামভর্তি নকল জীবাণুনাশক হেক্সিসল ও স্যাভলন উদ্ধার করা হয়।
পারফিউমের এসব দোকানে ড্রাম ও জার ভর্তি করে দেদার বিক্রি হচ্ছে নকল জীবাণুনাশক সামগ্রী। ড্রাম ও জার ছাড়াও পেপসি, ফানটা ও পানির বোতল ভর্তি করে বিক্রি করা হচ্ছে নিম্ন মানের নকল সুরক্ষা সামগ্রী।
১৫ জুন টানা দুই ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল সুরক্ষা সামগ্রী ধ্বংস করেন জেলা প্রশাসনের দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযানে কয়েক লাখ টাকার নকল হেক্সিসল ও স্যাভলন ধ্বংস করা হয়।
তারপরও নগরীতে নকল হেক্সিসল ও স্যাভলন বিক্রি থেমে নেই। গত সোমবার অভিযান চালিয়ে নগরীর বিবিরহাট এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ নকল সুরক্ষা সামগ্রী উদ্ধার ও একজনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
জানা যায়, নিম্ন মানের সুরক্ষা সামগ্রী ও স্যানিটাইজার নকল করে বাজারজাত করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন কোম্পানির লেবেল লাগিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতি মোড়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, স্যাভলন, ডেটলসহ নানা ধরনের সুরক্ষা সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। এসব সামগ্রী আসল না নকল বোঝার উপায় নেই।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ.ম.ম মিনহাজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, নকল স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয় এমন কেমিক্যাল দিয়ে যদি কোনো স্যানিটাইজার বানানো হয় তাহলে ক্যান্সারের মতো রোগও হতে পারে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নকল ও ভেজাল স্যানিটাইজার ও মাস্ক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোনো অবস্থাতেই বাজারে এসব বিক্রি করতে দেয়া হবে না
Discussion about this post