মানিকগঞ্জ-১ আসনের এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে ঘিরে চলছে জেলার সর্বত্র তোলপাড়! গত কয়েকদিন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এমপি দুর্জয় ও তার ঘনিষ্ঠজনদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি নিয়ে প্রকাশিত খবরা খবরই এখন আলোচনা সমালোচনার শীর্ষে রয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চায়ের দোকান সর্বত্রই চলছে আলোচনার ঝড়।
দুর্জয়ের আলোচনার নতুন ইস্যু আলোচিত পাপিয়া! মূলত এমপি দুর্জয় নামের সঙ্গে ’পাপিয়া কান্ড’ জড়িয়ে থাকার বিষয়টি তার জন্য এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক চেষ্টার পরও এমপি ও তার ঘনিষ্ঠজনরা দুর্জয়ের নামের থেকে পাপিয়াকে হটাতে পারছেন না, বরং যৌথ নামটি রীতিমত স্থায়ীত্ব পেতে বসেছে।
পাপিয়া কান্ডের কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার মাঝে শুরু হয়েছে করোনার মহাদুর্যোগ। তারপরও মানিকগঞ্জবাসীর মুখে মুখে দুর্জয়-পাপিয়া’র নানা মুখরোচক কাহিনী। এ নিয়ে প্রচার প্রচারণা তুঙ্গে থাকায় ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে উঠেছেন এমপি। ফলে এর জের ধরে তার আক্রোশমূলক হয়রনির শিকার হচ্ছেন কেউ কেউ। অনেকেই নানারকম নীপিড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। এমনটাই দাবি করছেন তার নির্বাচনি এলাকার জনগণ। এমপি দুর্জয়ের সঙ্গে পাপিয়ার নাম যুক্ত করে কেউ কিছু মন্তব্য করলেই রেহাই নেই। তাকে সমুচিত শায়েস্তা করতে দুর্জয় এমপির দলবল হাজির হয়! হামলা-ভাংচুর, মারধোর হজম করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
এলাকাবাসী এমনকি ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীদের এমন হয়রানি, মামলা রুজু ও জেল জুলুম খাটিয়েও পাপিয়া কান্ড থেকে কোনভাবেই রেহাই পাচ্ছেন না দুর্জয়। এ নিয়ে সংসদীয় এলাকাসহ গোটা জেলা জুড়ে দফায় দফায় বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। পাপিয়াকান্ড নিয়ে নিজের দাম্পত্য জীবন ও পরিবারেও নানারকম বিতর্ক সৃষ্টির অশান্তি পোহাতে হচ্ছে দুর্জয়কে। তাই কেউ কেউ বলছেন ভবিষ্যতে দুর্জয়ের জন্য ‘বিষফোঁড়া’ হতে পারে সেই পাপিয়া। এমনকি রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকতে পারে এই ইস্যু।
এদিকে, পাপিয়া কান্ডের আদ্যপ্রান্ত অনুসন্ধানকারী সিআইডি কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও দুর্জয় ’পাপিয়ামুক্ত’ সংক্রান্ত কোনো চুড়ান্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে পারছেন না। এ কারণে নিজের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি সকলের কাছে পাপিয়ামুক্ত থাকার বিষয়টি বিশ্বাসও করাতে পারছেন না। জানা যায়, মদ-নারী, হুন্ডি, চাঁদাবাজিসহ সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র গড়ে চরম বিতর্কিত সাবেক মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার সঙ্গে এমপি দুর্জয়ের সখ্যতা থাকার বিষয়টি সে সময় ব্যাপক আলোচিত হয়। শুধু সখ্যতা নয়, পাপিয়ার অপরাধ থেকে শুরু করে বিনোদনমূলক কর্মকান্ডে যে ক’জন প্রভাবশালী ব্যক্তির সেল্টার ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে সাবেক ক্রীকেট অধিনায়ক দুর্জয়ের নাম উঠে আসে। ভাইরাল হয়ে পড়ে বেশকিছু ছবি।
ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত একটি সূত্র জানায়, পাপিয়া ও তার অপরাধ সহযোগিরা মূলত ক্রীড়াঙ্গনের সেলিব্রেটিদের উপর ভর করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বড় বড় অপরাধ সংঘটনের মাস্টরপ্লান নিয়ে তৎপর ছিলেন। তাদের দৃষ্টি ছিল দুবাই, সৌদী আরব, ব্রুনাইসহ মুসলিম ধনী দেশগুলোর ধনাঢ্য ক্রীড়ামোদী শেখদের উপর। যে কোনো উপায়ে তাদের কাছাকাছি ঘেষে, নানামুখি প্রতারণার মাধ্যমে তাদের থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার নানা ফন্দি আঁটেন পাপিয়া ও তার সহযোগিরা। কিন্তু বিধিবাম, বড় ধরনের কোনো সুযোগ হাতিয়ে নেয়ার আগেই র্যাবের চৌকষ টিমের হাতে পাপিয়া চক্রে ধরাশায়ী হয়।
তারকাদের সঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে প্রকাশ করাটা বোধ হয় নেশাই হয়ে ওঠে পাপিয়া’র। সাংসদ, মন্ত্রী থেকে শুরু করে জনপ্রিয় বিভিন্ন মানুষের সঙ্গেও তার ফ্রেমবন্দি হওয়ার দৃশ্য ছড়িয়ে ছিল নেট দুনিয়ায়। তার নেশার থাবা থেকে বাদ পড়েনি ক্রীড়াঙ্গনও। যার মধ্যে সাবেক ফুটবলার আরিফ খান জয় এবং বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার নানা দৃশ্য সারাদেশে ভাইরাল হয়েছে। ঠিক তখন থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। সাবেক মন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় এমপি’র সঙ্গে সখ্যতা, ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলে পাপিয়া নিজের সফল কুটকৌশলের পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু অপরাধ সাম্রাজ্যের ভয়ঙ্কও এ নারী চক্রের কব্জায় পড়া নিয়ে জয়-দুর্জয়ের সমালোচনার শেষ নেই। পাপিয় চক্রের সঙ্গে সখ্যতার তালিকায় যার নামই উঠেছে তারাই বাদ প্রতিবাদ করে বিতর্ক থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও জয়-দুর্জয়ের অনেকটা রহস্যময় ভূমিকা দেখতে পান দেশবাসী।
মাদক-অস্ত্র চোরাচালান, জমি দখল করিয়ে দেয়া, হোটেলে নারীদের দিয়ে যৌন বাণিজ্য থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জনের অভিযোগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারকৃত পাপিয়ার সঙ্গে কার কি রকম সম্পর্ক ও বাণিজ্য ছিল তা নিয়েও সারাদেশে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। ফলে ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে বিশেষ প্রেসনোট জারি করায় পাপিয়া চক্রে সম্পৃক্ত এমপি, মন্ত্রী, দলের প্রভাবশালী নেতারা সুরক্ষা লাভ করে। এ সুবিধা ভোগ করেন এমপি দুর্জয়ও। কিন্তু তার আগেই দুর্জয়ের সংসদীয় আসন এলাকায় মানুষের মুখে মুখে রটে যায় তাদের সখ্যতা ঘনিষ্ঠতার নানা মুখরোচক কাহিনী। দলীয় নেতা কর্মি এমনকি এমপি দুর্জয়ের ব্যক্তিগত ক্যাডার গ্রুপের সদস্যদের ফেসবুক টাইমলাইন গুলো দুর্জয়-পাপিয়ার নানা ঘনিষ্ঠতার ছবি ঝুলতে থকে। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি সামাল দিতে করোনা লকডাউন বিপর্যয়ের মধ্যেও কঠোর হয়ে উঠেন এমপি দুর্জয়। তাকেসহ পাপিয়াকে জড়িয়ে যারাই থা বলেছেন তাদের বাড়িঘরেই নেমে এসেছে হয়রানি র্নিাতনের স্টীম রোলার।
এদিকে, এসব বিষয়ে দুর্জয় কখনও সরাসরি মুখ না খুললেও বরাবরই প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার স্ত্রী ফারহানা রহমান হ্যাপী। সবসময় এ বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। বরাবরই তিনি বলে এসেছেন এগুলো সব ষড়যন্ত্র ও দুর্জয়ের প্রতিপক্ষের কাজ। পাপিয়া ইস্যুতে শত চেষ্টা করেও দুর্জয়ের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আজকের অগ্রবানী
Discussion about this post