করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান ও দেশের স্বনামধন্য আবৃত্তিকার মোস্তফা কামাল সৈয়দ।
দুপুর দেড়টায় তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার করোনা পজিটিভ ছিল বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন এনটিভির একজন বিশেষ প্রতিনিধি।
স্বনামধন্য টিভি প্রযোজক, নাট্য নির্দেশক, অভিনেতা, আবৃত্তিকার ও পরিচালক হিসেবেও ব্যাপক পরিচিতি ছিল মোস্তফা কামাল সৈয়দের। বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) উপমহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্ত্রীসহ এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর স্ত্রী কণ্ঠশিল্পী জিনাত রেহেনা।
মোস্তফা কামাল সৈয়দ কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন টিভি চ্যানেলে। ২০০৩ সালে এনটিভির শুরু থেকে তিনি অনুষ্ঠান বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠানপ্রধান ছিলেন। ৫২ বছরের কর্মজীবনে তিনি পাকিস্তান টিভিতেও শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করেছেন।
রোববার সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে তার জানাজা হয়। এরপর ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় তাঁর সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন বিনোদন ও সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ।
এনটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পর্দার পেছনের মানুষ হলেও মিডিয়া জগতে সজ্জন ও বিনয়ী মানুষ হিসেবে পরিচিত মোস্তফা কামাল সৈয়দের কণ্ঠ বাংলাদেশের দর্শকের কাছে খুব চেনা। আশি দশকের শুরুতে বিটিভির নাটকের শুরুতে সূচনা সংগীতের পাশাপাশি ভূমিকা কিংবা পুরো নাটকের সারমর্ম সূচনাপর্বে নেপথ্য কণ্ঠে ভেসে আসত। অনেক সময় নাটকের শেষে নেপথ্যে থেকে কিছু না বলা কথা প্রচার হতো। সে সময়ের বেশির ভাগ নাটকের ভূমিকায় কিংবা উপসংহারে শোনা যেত মোস্তফা কামাল সৈয়দের কণ্ঠ।
মোস্তফা কামাল সৈয়দের মৃত্যুর খবরে এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘জীবন-মৃত্যু মহান আল্লাহ তায়ালার হাতে। তবুও আমরা তাঁর সুস্থতা ও সুচিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম। পাশাপাশি আল্লাহর করুণা লাভের আশায় ১৮টি মসজিদে কোরআন খতম করিয়েছিলাম।’
এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আলফ্রেড খোকন বলেন, ‘প্রধান মোস্তফা কামালের মৃত্যুতে আমরা ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছি। এ খবর মেনে নেওয়ার মতো নয়। গত ১১ মে মোস্তফা কামাল সৈয়দ অসুস্থ হলে তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। আজ দুপুরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মোস্তফা কামাল সৈয়দের প্রযোজনায় বেশ কিছু নাটক দর্শকের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। সত্তর দশকের শেষের দিকে তাঁর প্রযোজনায় মমতাজউদদীন আহমদ লেখা ‘প্রজাপতি মন’, আশি দশকের শুরুতে আন্তন চেখবের গল্প অবলম্বনে মমতাজউদদীন আহমদের লেখা ‘স্বপ্ন বিলাস’ ছাড়াও ‘নিলয় না জানি’, ‘বন্ধু আমার’, ‘নীরবে নিঃশব্দে’, কাজী আব্দুল ওয়াদুদের লেখা ‘নদীবক্ষে’ উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘কুল নাই কিনার নাই’ ইত্যাদি সফল নাটকের সফল প্রযোজক ছিলেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ।
মোস্তফা কামাল সৈয়দের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীসহ অনেকেই। জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে লেখেন, ‘আঙ্কেল, সারাজীবন বলেছেন পজিটিভ নাটক বানাতে। আজ আপনি আমাদের সব নেগেটিভ করে দিয়ে চলে গেলেন! সারাজীবন বলেছেন, আপনার আল্লাহ আছেন, আপনি নামাজ পড়েন, আপনার কিচ্ছু হবে না; আঙ্কেল, আমাদের অভিভাবক আপনি, আপনি পিতাসম! কোথায় চলে গেলেন আমাদের একা করে দিয়ে! যেখানেই যান, আপনি আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।
অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা ফেসবুকে লেখেন, ‘বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তি! আজকে উনি চলে গেলেন! মোস্তফা কামাল সৈয়দ আমাদের দেশের টেলিভিশনের একজন দিকপাল! বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং এনটিভির অনুষ্ঠান প্রধান হিসাবে তিনি কেবল অগণিত শিল্পী এবং পরিচালকের বিকাশে সাহায্য করেছেন তা না, আমাদের রুচি তৈরিতেও বিশাল ভূমিকা রেখেছেন! আল্লাহ তাঁর বেহেস্ত নসিব করুন!’
Discussion about this post