বিশ্ব কাঁপানো করোনারভাইরাসের চেয়ে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে সৌদি আরবে হৃদরোগে প্রতিদিন প্রবাসীদের প্রাণ কেড়ে নেয়া। এ পর্যন্ত প্রাণঘাতী রোগ করোনাভাইরাসে মারা গেছে ৭জন আর মানসিক চাপে, হার্ট অ্যাটাকে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা গেছে ৩৫ জন। প্রবাসীদের অনেকেই বলছেন, “করোনায় মরবোনা, আমরা মারা যাবো অবরুদ্ধ ও গৃহবন্দী থেকে মানসিক চিন্তা, অভাব, অর্থ সংকটে ও না খেয়ে।” প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে প্রবাসী এ রেমিটেন্স যোদ্ধারা।
সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে এই রোগের কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মৃত্যুর হার ক্রমশ বেড়ে চলছে। পরিসংখ্যান বলছে আগের বছরের তুলনায় ২০১৯ সালে প্রবাসী মৃত্যু বেড়েছে ১৩ শতাংশ। যদিও এটি দেশে ফেরত যাওয়া বৈধ প্রবাসী শ্রমিকদের মরদেহের হিসাব মাত্র। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ স্ট্রোক ও হৃদরোগ। এদের অধিকাংশেরই বয়স ২৫-৩৫ বছরের মধ্যে।
সরকারি হিসাব মতে, প্রতিবছর মরদেহ যায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে আর এর মধ্যে বেশির ভাগ যায় সৌদি আরব থেকে। সরকার যাদের রেমিটেন্স যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, যাদের মাথার ঘাম পায়ে পেলে দেশের জন্য রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে, দেশ আজ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিনত হচ্ছে, এই সমস্ত রেমিটেন্স যোদ্ধারা কেন অকালে প্রাণ হারাচ্ছে? সুস্থ্য মানুষ দেশ থেকে আসা পরও প্রবাসী শ্রমিকদের স্ট্রোক ও হৃদরোগে মৃত্যু কেন বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ থেকে বেশীরভাগ কর্মী ঋণ নিয়ে বিদেশে আসেন, অনেকে বাড়ি ঘর বন্ধক রেখে কেউ বা মহাজনের কাজ থেকে কড়া সুদে টাকা নিয়ে বিদেশে আসে। পরে যে বেতনের কথা দালালরা বলেন, সেই বেতন পায় না। এই নিয়ে বড় মানসিক চাপ কাজ করে। তার সঙ্গে তো আছে হাড়ভাঙা পরিশ্রম। এভাবে শারীরিক ও মানসিক চাপে হার্টঅ্যাটাকে মারা যান অনেক প্রবাসী।
প্রবাসীরা বলেন, সৌদি আরবে চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যয়ে করে প্রবাসে আসা ব্যয়ের তুলনায় আয় কম, দীর্ঘদিন স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে একাকিত্বই প্রবাসী শ্রমিকদের হৃদরোগের প্রধান কারণও হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
প্রবাসীরাদের যেখানে নিজের ভবিষ্যত অনিশ্চিত, সেইখানে নিজের পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দিশেহারা। তাই যেকোন উপায়ে পরিবারের জন্য টাকা পাঠাতে পারলেই মহাখুশি। বর্তমানের পরিস্থিতিতে পরিবারের কথা চিন্তা করে প্রবাসে নানা চিন্তায়, ভুগতে হচ্ছে বিভিন্ন রোগে এবং শেষ পর্যন্ত হৃদরোগে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হচ্ছে।
Discussion about this post