৭ই মার্চ, বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এদিনে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৮ মিনিটের কালজয়ী ভাষণ দেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। অলিখিত সেই ভাষণেই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান।
উনপঞ্চাশ বছর আগের এই দিনটিতে বাঙ্গালীর গন্তব্য ছিল একটিই। লাখো জনতার স্রোত তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান আজকের সোহরাওয়াদী উদ্যানে। স্লোগানে স্লোগানে মুখর ময়দান। বেলা ২টা ৪৫ মিনিট, জনসমুদ্রে হাজির বাঙ্গালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব।
দেশের ক্রান্তিকালে সেদিন সেই মঞ্চে একাই ভাষণ দেন রাজনীতির কবি। দারুণ এক স্বতস্ফুর্ততায় ১৮ মিনিটের অসামান্য সেই কথামালা ছিল অলিখিত। যা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কো স্বীকৃত।
বক্তৃতার শুরুতেই জাতির পিতা তুলে ধরেন তৎকালীন পূর্ব বাংলার নানা বঞ্চনার চিত্র। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের আগে সেদিন মঞ্চে ঘোষণা দেন স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা নুরে আলম সিদ্দিকী। ডিবিসি নিউজকে তিনি বলেন, সাড়ে সাতকোটি মানুষের কন্ঠ প্রতিধ্বনিত হয়েছিল সেদিন একটি কন্ঠে।
স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, গোটা জাতি কি অবস্থার মধ্যে আবর্তিত হবে সবকিছুই অজানা ছিল। তখনই বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি বাঙালি জাতির মুক্তির প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যেকটি কথার মধ্যে একদিকে ছিল উৎসাহ অন্যদিকে ছিল বাঙালীকে ত্যাগের জন্য প্রস্তুতি।
বঙ্গবন্ধুর উপর চাপ ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার। কিন্তু কালজয়ী সেই ভাষণে কৌশলে তিনি ডাক দেন স্বাধীনতার। প্রস্তুত থাকতে বলেন পুরো জাতিকে। নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, কথার কৌশলের মাধ্যমে একটা জাতিতে একদিকে আহ্বান জানিয়েছেন অন্যদিকে তাকে বিচ্ছিনবাদী সুযোগও থাকলো না।
ঐদিন ২টা ৪৫ থেকে ৩টা ৩ মিনিট পর্যন্ত এই ১৮ মিনিট ভাষণ দিয়েই স্বাধীনতাকামী একটি জাতিকে সশস্ত্র বাঙ্গালীতে রূপান্তর করেছিলেন শেখ মুজিব।
৭১ এর ৭ই মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ এই ১৮ দিনে ঐতিহাসিক ভাষণটি সাড়ে সাত কোটি বাঙালীকে প্রস্তুত করেছিল মুক্তির সংগ্রামে–স্বাধীনতার যুদ্ধে। প্রজ্জ্বলিত করেছিল মুক্তিযুদ্ধের দাবানলকে, যার ফলাফল একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভুখন্ড, ‘বাংলাদেশ’।
Discussion about this post