জুয়াইনা আকতার:
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারী আসলেই আমাদের চেতনা গুলো যেন সব জেগে ওঠে। সারা বছর আমরা কানে তুলা দিয়ে থাকি। আমাদের ভাষা যে আমাদের নিজের দেশের মানুষের কাছে কতটা নিগৃহীত তা আমার প্রবাস জীবনে এসে আরো বেশী করে উপলব্দি করতে পেরেছি। বাংলাদেশের বাংলা গানে, উপন্যাসে যে মধুরতা, যে গভীরতা যে প্রাচুর্য আছে তা আমি মনে করি অন্য কোন ভাষায় পাওয়া যাবে না ।
যখন এখানে আমি কারো চাল চলন দেখি বুঝতে পারি তিনি বাঙ্গালী তার সাথে যখন বাংলায় ভাষায় কথা শুরু করি এমন একটা ভাব! বাংলা আবার কি ভাষা! আধো হিন্দি আধো আরবি, ইংরেজীতে সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। তখন আমার মাইকেল মধূসুদন দত্তের কথা মনে পড়ে। কতটা প্রতিভা থাকলে একজন মাইকেল মধুসুধন হওয়া যায়। আর তিনি কিনা বিদেশী নিজের ভাষা ছেড়ে বিদেশি ভাষার লেখক হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য তাকে সেই অবহেলিত ভাষায়ই দিয়েছে মর্যাদা। তিনিও তার ভূল বুঝতে পেরেছিলেন। যদি আরো আগে বুঝতেন তাহলে হয়তোবাংলা সাহিত্য আরো সমাদৃত হতো। বাংলাদেশে এখন চলছে বাংলিশ সংস্কৃতি। তা না হলে তুমি খ্যাত। টেলিভিশন রেডিওতে যে উপস্থাপনা চর্চা চলে তাতে আর বেশী আশাহত হতে হয়।
যে ভাষার জন্য একদিন সালাম, শফিক, বরকত, জব্বার আরও অনেক নাম না জানা শহীদ। তারা যদি আজ দেখতে পেতেন তাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভাষা আজ প্রতিনিয়ত অপমানিত হচ্ছে তাদেরই স্বজনদের কাছে তাহলে হয়ত লজ্জায় তারা আরো একবার শহীদ হতো।
চাকুরী সূত্রে একটি স্কুলের বাংলা শিক্ষিকা হওয়ার পর নিজের ভাষাকে আরো বেশী অবহেলিত মনে হচ্ছে, যখন দেখি বাংলাদেশী ছেলেমেয়ে উর্দু পড়ছে। এর জন্য আমাদের পিতামাতারা ই অনেকাংশে দায়ী। আমাদের মা-বাবা রা ভাবেন বাংলা না শিখলেও চলবে! নিজের বাচ্চারা যখন দেখে আশে পাশের বাচ্চারা কেউ বাংলায় কথা বলে না আমরা কেন বলব!। তাদের কে বোঝাতে হয় ওটাই আমার তোমার শিকড়। যেখানেই থাকনা তুমি তোমার শেকড় ভুলে গেলে যে তুমি একদিন অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
দেশে হোক আর বিদেশে হোক আমরা যে যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে আমাদের মাতৃভাষার সম্মান বজায় রাখব।
নিজের ভবিষ্যতের কাছে একটাই সংবাদ আমাদের দিতে কবি আব্দুল হাকিমের ভাষায়—
যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।
তারা জীবনের তাগিদে বিদেশ ভাষা শিখবে কিন্তু সেই সাথে নিজের শিকড় নিজের মায়ের মুখের ভাষাও শিখবে। এই হোক আমাদের এই ভাষা দিবসের অঙ্গীকার।
লেখক: আরব আমিরাত প্রবাসী,
আমিরাতে একটি স্কুলের বাংলা শিক্ষিকা ।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
Discussion about this post