কিছু মাদরাসায় শিক্ষার নামে তথাকথিত হুজুরেরা ছাত্রদেরকে কি পরিমান নির্যাতন করে তা ভাষায় বর্ননা করা যাবেনা! তেমনি এক নির্যাতনের কথা সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুকে ডা তানভির শুভ এভাবে বর্ননা করেছেন..
পাঞ্জাবি পাজামা পরিহিত বাচ্চাটাকে রবিবার রাতে যখন ইমারজেন্সি ওটিতে ঢুকানো হয় তখন বাজে ৩ টা। ব্যাথা ও আতংকে বাচ্চা ছেলেটা অঝোর ধারায় কাদছিলো। ওর ফাইলটা হাতে নিলাম, অবাক বিস্ময়ে তার এক্সরে ফিল্মগুলোতে চোখ বুলালাম। ১০ বছর বয়সি ছেলেটার পায়ের তিন জায়গায় ভাংগা।বাচ্চাটার মাথায় হাতটা বুলিয়ে দিতেই সে একটু আস্বস্থ হল। ভীত সন্ত্রস্ত চোখে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছে।।যদিও ফাইলে ওর নাম লেখা তারপরেও মাস্কটা খুলে ভীত ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম নাম কি তোমার বাবা?
-উত্তর এলো- “মাসুম”।
কিভাবে এক্সিডেন্ট করলে?
-ছাদ থেইকা পইড়া গেছিলাম।
পাশ থেকে এক ওটি বয় বললো, স্যার মাদ্রাসা থেকে পালাতে গিয়ে ওর এই হাল।
মাসুম ক্ষীন কণ্ঠে প্রতিবাদ করলো।ওর কাছ থেকে পুরো ঘটনাটা শুনতে চাইলাম।বাকি গল্পটা মাসুমের মুখেই শুনি-
” আমি মাসুম, আমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আমরা দুই ভাই দুই বোন। আমার ভাই এবার এসএসসি দিছে।বোনেরা স্কুলে পড়ে।আমার আব্বা বিদেশ থাকে। বেশি দুষ্টামি করতাম বলে মা আমারে ৫ দিন আগে মাদ্রাসা ভর্তি করাইয়া দেয়।আমি আমার মারে ছাড়া একদিনো থাকতে পারি না।মাদ্রাসায় বইসা কানতাম আর বাড়ি চইলা যাইতে চাইতাম। বাড়ি যাইতে চাইতাম বইলা হুজুর আমারে শিকল দিয়ে বাইন্ধা রাখছে টানা ৪ দিন। বেল্ট আর লাঠি দিয়ে মারছে।পিঠে এখনো দাগ আছে। হুজুরে বলছে, মায়ের কাছে এই সব বললে একেবারে মাইরা ফালাবে। ৪ দিন পর হুজুররে বলছি আমি এইখানেই থাকমু, আমারে আর মাইরেন না, শিকল খুইলা দেন। শিকল খুলার পরের দিন আমি মাদ্রাসার ছাদে উইঠা পাশের বাড়ির ছাদ দিয়ে পালাইতে যাই।ভাগ্য খারাপ, আমারে হুজুর দেইখা ফালায়। হুংকার দিয়া কয় এখুনি নাম তা না হইলে তোরে মাইরা ফালামু। আমি ভয় পাইয়া নামতে গিয়া ৩ তালা থেইকা মাটিতে পইড়া যাই। ”
একটা বাচ্চা ছেলের নির্যাতনের গল্প তার নিজের মুখ থেকে শোনা মোটেও সুখকর ছিল না। ছেলেটার গলা কেপে উঠছিল বারে বারে সাথে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না।
স্যার আমার পা ঠিক করতে পারবেন তো?
হেসে বললাম, হুম, ঠিক করে দেবো, এরপর দশ তলা থেকে পড়ে গেলেও তোমার কিছু হবে না।
না স্যার, আমি আর দুস্টামি করমু না। আমার মারে আপনি একটু বলে দিয়েন। আর ঐ হুজুরের যেনো বিচার হয় সেই ব্যাবস্থা কইরেন।
শিশু বয়সে ছেলেটার উপর যে হিংস্রতা হয়ে গেলো এই রেশ থেকে যাবে আজীবন। তার মানসিক বিকাশ মুখ থুবড়ে পড়বে।প্রতিশোধের স্ফুলিঙ্গ তার অন্তরটা পুড়িয়ে দিবে।সেই পোড়া অন্তরের জ্বালা মেটাতে সেও একদিন ঐ হুজুরের মত কাউকে শিকল দিয়ে বেধে পিটালে অবাক হব না।
Discussion about this post