সেলিব্রেটিবিডি:
গীতিকার প্রিন্স মাহমুদের লেখা জেমসের ‘বাবা’ বাংলা গান ওপার বাংলার জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো সারেগামাপায় গেয়েছেন বাংলাদেশি এক তরুণ। তার নাম মাইনুল আহসান নোবেল। এত দরাজ গলায় গানটা তিনি গাইলেন যে, গোটা সামাজিক মাধ্যম এখন নোবেলকে নিয়ে আলোচনায় মুখর। সবাই প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন নোবেলকে৷ যদিও নোবেল গানের চর্চা করছেন অনেক দিন ধরেই। প্রথম তিনি আলোচনায় আসেন “বাংলালিংক নেক্সটিউবার” রিয়েলিটি শো’র মাধ্যমে। সম্ভাবনাময় ইউটিউবার খুঁজে বের করার সেই প্রোগ্রামে নোভেল সেরা ছয়ের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিলেন। কিন্তু, সবচেয়ে বেশি জায়গা করে নিয়েছিলেন মানুষের মনে, তার গান দিয়ে। সেই প্রোগ্রাম থেকে নোবেলকে অনেকেই চেনে, জানে তার অসাধারণ ক্যারিশমেটিক কণ্ঠের কথা।
নেক্সটিউবার শোতে যেদিন নোবেল বাদ পড়েন, সেদিন তিনি গেয়েছিলেন গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলীর লিখা আইয়ুব বাচ্চুর গান- “হাসতে দেখো, গাইতে দেখো, অনেক কথায় মুখর আমায় দেখো, দেখো না কেউ হাসি শেষে নিরবতা..”। ওই মুহুর্তে গানটার আবেদন এতোটাই বেশি ছিল যে, বিচারকরা নোবেলকে স্ট্যান্ডিং ওভেশন দেয়, দাঁড়িয়ে সম্মান জানায়। যে বিদায় এরকম সম্মানের, সেটা বিদায় নয়, সেটা এক নতুন যাত্রা। নেক্সটিউবার থেকে মানুষ নোবেলকে চিনতে শুরু করে। তার গান নিয়ে অনেকেই কথা বলতো, আলোচনা করতো। এই ব্যাপারটির জন্য নোবেল নিজেই নেক্সটিউবার প্রোগ্রামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।সেই রিয়েলিটি শো থেকে অপ্রত্যাশিত ভাবে বাদ পড়লেও নোবেল থেমে থাকেননি সেখানে। মন খারাপ করে দমে যাননি। তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া। গানটা ছাড়েননি। এজন্যেই এখন আরো বড় মঞ্চে তিনি। সারেগামাপার গ্র্যান্ড অডিশনে নোবেল মাতিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গকে৷ নোবেলের এই উত্থান অলৌকিক নয়, পরিশ্রমেরই ফল। এজন্যেই আজ কলকাতার সড়কে দেখা যায় বাংলাদেশি নোবেলকে নিয়ে বিলবোর্ড, যেখানে লেখা থাকে স্বভাবে শান্ত, কণ্ঠে প্রাণবন্ত!
এগিয়ে চলো‘র পক্ষ থেকে নোবেলের সাথে যোগাযোগ করা হয়। এই মুহুর্তে তিনি ভারতে আছেন, সময়টা দারুণ ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবুও, তিনি এরই মধ্যে সময় নিয়ে জানালেন গান নিয়ে তার ভাবনার কথা।গানের প্রতি নোবেলের প্যাশন গড়ে উঠে বাংলাদেশী শিল্পীদের সেরা সেরা গান শুনেই। নোবেল জানান, “আইয়ুব বাচ্চু, জেমস এর গান ক্যাসেট প্লেয়ারের আমল থেকে শুনে শুনে বড় হয়েছি। বাবা নিজেও একজন শিল্পী হতে চেয়েছিলেন। যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা স্বত্তেও তিনি শিল্পী হতে পারেননি, বিবিধ বাঁধা পেরিয়ে। আমি বাবার সেই স্বপ্নটাকে এখন নিজের স্বপ্নই বানিয়ে নিয়েছি।” নোবেল স্বপ্ন দেখেন, তিনি একদিন আরো বড় শিল্পী হবেন। সেই লক্ষ্যেই কাজ করছেন। গানটাই এখন তার নিজের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাবা মাও নোবেলের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেন। তাই বাবা মা, বন্ধুবান্ধব আর তার গানের শ্রোতাদের প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞতাও জানালেন নোবেল৷
জেমসের ‘বাবা’ শিরোনামের গানটা এমনিতেই আবেগী। তার উপর এই গান এর আগে কোনো মঞ্চে প্রকাশ্যে গাননি নোবেল। কিন্তু জড়তা একদমই ছিল না গাওয়ার সময়। বরং, নোবেলের নিজের স্বভাবসুলভ একটা ভঙ্গি আছে। গান গাইবার সময় তিনি চোখ বন্ধ করে গানের সাথে একাত্ম হয়ে যান। এমনিতেই দরাজ কণ্ঠ, তাতে আবেগের সবটুকু ঢেলে দেন যখন গান তখন জীবন্ত হয়ে উঠে নোবেলের গলায়। তাই জেমসের বাবা নিয়ে গানটা নোবেলের গলায় শুনেও বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাই আবেগ আক্রান্ত হয়েছে, নোবেলের প্রতিভার প্রশংসা হয়েছে বিস্তর।নেক্সটিউবার শোয়ের শেষটা হয়েছিল স্ট্যান্ডিং ওভেশন পেয়ে, এবার নোবেলের সারেগামাপা পর্ব শুরুই হলো স্ট্যান্ডিং ওভেশন পেয়ে। তিনি যখন গানটা শেষ করলেন তিনজন বিচারকই দাঁড়িয়ে তালি দিয়ে নোবেলের গানকে প্রশংসিত করলেন।
সারেগামাপা বেশ বড় মঞ্চ। নোবেল এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের গানকে রিপ্রেজেন্ট করতে চান, বাংলা গান শুনাতে চান। এই প্রতিযোগিতা নিয়ে তিনি আশাবাদী। তার লক্ষ্য শুধু নিজের গান ঠিক রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়া। অনেকেই জানেন না, নোবেল এখন “দ্যা ট্র্যাপ” ব্যান্ডের ভোকাল। এই ব্যান্ড নিয়ে কিছুদিন আগে বামবার তত্ত্বাবধানে একটা অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন নোবেল, যেখানে ছিল শিরোনামহীন, ওয়ারফেজ, আর্টচেল, মাইলস সহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বড় বড় ব্যান্ড। একই মঞ্চে এতো বড় বড় ব্যান্ডদের সাথে পারফর্ম করার সুযোগ নোবেলকে আরো বড় অগ্রযাত্রার পথে সাহস যোগাবে নিশ্চিত। এমনিতেও তার নিজের ব্যান্ড দ্যা ট্র্যাপ থেকে কয়েকটি ট্র্যাক প্রকাশ করতে চান, ভারত থেকে ফিরেই শুরু হবে সে কাজ৷ বাংলা গানের বিশেষত ব্যান্ড সংগীতের আশি নব্বুই দশকের সোনালী সময়ের মতো আবার নতুন করে গানের স্বর্ণালী সময়টা ফিরে আসুক এই স্বপ্ন দেখেন নোবেল।
তার ইউটিউবে নোবেল ম্যান নামে একটি চ্যানেল আছে। এই প্রজেক্ট নিয়েও কাজ করবেন সামনে৷ ব্যান্ড ও প্রজেক্টের মৌলিক গান বের করার ইচ্ছে আছে সামনে। সেই লক্ষ্যেই এগুচ্ছেন নোবেল। পুরোপুরি গানের মানুষ হয়ে থাকতে চান। স্বপ্ন দেখেন, একদিন প্রিয় গায়ক আইয়ুব বাচ্চু, জেমসের সাথে এক মঞ্চে গান গাইবেন। লিজেন্ডারি গায়কদের আশীর্বাদ মাথায় পেতে নিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বাংলা রক গানের ধারাকে। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন অসাধারণ প্রতিভাবান এই শিল্পী৷ মানুষের ভালবাসায় মুগ্ধ তিনি, এই ভালবাসায় ছায়ায় থাকতে চান তিনি। তাই দোয়া চেয়েছেন বাংলাদেশের সকল দর্শকদের কাছে, শ্রোতাদের কাছে। তিনি শুধু একদিনের ভাইরাল না, গানের মায়া দিয়ে প্রতিদিনই মানুষের মনে জায়গা করে নিতে চান।
সেলিব্রেটিবিডি/এইচআর
Discussion about this post