পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগকে হত্যাকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত ছাত্রদলনেতা অপু দাস এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। পলাতক থাকা অবস্থায় সে মোবাইল ফোনে ও দালালের মাধ্যমে একের পর এক হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা এবং নিহতের পরিবারের সদস্যরা। মামলায় অপু দাসের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কথা বলায় এবং মিটফোর্ড এলাকার বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার দখল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অপু এসব হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, প্রকাশ্যে অর্ধশত লোক নির্মমভাবে সোহাগকে হত্যা করলেও এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সরাসরি হত্যায় জড়িত অনেক আসামিই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।নিহত সোহাগের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম অভিযোগ করে জানান, হুট করেই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আলোচিত একটি ঘটনা পুরোই আড়ালে চলে গেছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের কিছুই জানানো হচ্ছে নাএর আগে গত বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছিলেন, এ মামলায় বর্তমানে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- মাহমুদুল হাসান মহিন, টিটন গাজী, মো. আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, তারেক রহমান রবিন, সজীব ব্যাপারী, মো. রাজিব ব্যাপারী, নান্নু কাজী, রিজওয়ান উদ্দীন ওরফে অভিজিৎ বসু। এদের মধ্যে গত ১২ জুলাই টিটন গাজীর পাঁচ দিন ও গত ১৩ জুলাই আলমগীর ও মনিরের চার দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়। গত ১৪ জুলাই সজীব ও রাজিবের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ১০ জুলাই প্রথম দফায় ও ১৫ জুলাই দ্বিতীয় দফায় মহিনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সর্বশেষ গত ১৬ জুলাই আসামি নান্নু, রিজওয়ান ও রবিনের সাত দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে।কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নাসির উদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত ৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বাইরে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের চেষ্টা চলছে।
সোহাগের পরিবারের এক সদস্য বলেন, অপু দাস ও তার লোকজন শুধু হুমকিই দিচ্ছে না, হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টাও করছে। এটা কোনো সাধারণ অপরাধ না, একজন ব্যবসায়ীকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। অথচ পুলিশ আসামিদের সবাইকে ধরতে পারছে না, বরং আমাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছেডিএমপির কোতোয়ালি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোহাম্মদ ফজলুল হক হাসান, আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমাদের অভিযান নিয়মিত চলছে। কোনো পলাতক আসামি যদি হুমকি দিয়ে থাকে, তাহলে সে বিষয়ে জানালে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। সব আসামিকেই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
আসামি সজীবের দোষ স্বীকার, কারাগারে রাজীব: সোহাগকে হত্যা মামলায় রিমান্ড শেষে আসামি সজীব ব্যাপারী নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি স্বীকার করেছেন, আসামি মাহমুদুল হাসান মহিনের ডাকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন সজীব। এ ছাড়া সজীবের ভাই আরেক আসামি রাজীব ব্যাপারীকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।গতকাল শনিবার ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আসামি দুই ভাই সজীব ও রাজীবকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় আসামি সজীব স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সজীবের জবানবন্দি রেকর্ড করতে আবেদন করেন। এরপর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুল ইসলাম সজীবের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক সজীব ব্যাপারী। তার সঙ্গে মাহমুদুল হাসান মহিনের সখ্যতা ছিল। অ্যাম্বুলেন্স চালানোর পাশাপাশি মহিনের সঙ্গে বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে অংশ নিতেন তিনি। মহিনের ডাকে সেদিন ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন সজীব। জবানবন্দি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া অপর আসামি সজীবের ভাই রাজিবকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে পুলিশ। পরে তাকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন একই আদালত। এর আগে গত ১৪ জুলাই তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
Discussion about this post