বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জুলাই আন্দোলন দেশব্যাপী নতুন রাজনৈতিক আবহ তৈরি করলেও এর প্রভাব সীমাবদ্ধ ছিল না দেশের সীমানার মধ্যে। আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ও সংহতি প্রকাশে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ছিলেন সোচ্চার।ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায় অবস্থানরত প্রবাসীরা এই আন্দোলনের পক্ষে রাস্তায় নেমে এসেছেন, মানববন্ধন করেছেন, তহবিল গঠন করেছেন এবং আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব ও ইতালিতে আন্দোলনের পক্ষে প্রবাসীদের বেশ কয়েকটি কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ লক্ষ করা গেছে।
লন্ডনের হাইড পার্কে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নেন প্রায় ৫০০ বাংলাদেশি প্রবাসী। ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রবাসীদের সংহতি’ ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়।
মালয়শিয়ার কুয়ালালামপুরের বাংলা মার্কেট, কোতারায়া ও পুডু এলাকায় বাংলাদেশি প্রবাসীরা প্ল্যাকার্ডসহ প্রতিবাদ করেন। মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীসহ পেশাজীবীরা আলোচনায় অংশ নেন। প্রবাসী রাশেদুল হক বলেন, আমরা বিদেশে থাকলেও দেশের গণতন্ত্র নিয়ে চিন্তিত। এই আন্দোলন সফল হোক, এটাই চাওয়া।সৌদি আরবের জেদ্দা, রিয়াদ ও মক্কায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা মসজিদ প্রাঙ্গণে দোয়া মাহফিলের পাশাপাশি আন্দোলনের পক্ষে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। রিয়াদে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তারা বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হলে প্রবাসীদের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত।
ফেসবুক, ইউটিউব ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবাসীরা ভিডিও বার্তা, প্রতিবাদী পোস্ট ও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালান। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ভিত্তিক ‘ডায়াসপোরা ফর ডেমোক্রেসি’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম প্রায় ১.৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করে আন্দোলনের আহতদের চিকিৎসা ও আইনি সহায়তায় পাঠায়।
যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী আইনজীবী ও সাংবাদিকরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নজরে আনতে কাজ করেন। প্রবাসী আইনজীবী হাফিজ মাহবুব বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় আন্তর্জাতিক চাপ জরুরি।জুলাই আন্দোলনে প্রবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে প্রবাস জীবন তাঁদের দেশপ্রেমকে বিলীন করতে পারেনি। দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় প্রবাসীরাও আজ আর নীরব দর্শক নন, বরং দায়িত্বশীল কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। আন্দোলন শুধু রাজপথে নয়, এখন বিশ্বমঞ্চেও।
Discussion about this post