ষোল দিনের অপেক্ষা শেষে ফিরেছে ছেলে। কিন্তু কী নির্মম এই ফিরে আসা— শুধু শরীর, প্রাণহীন; বাক্সবন্দি হয়ে।
গত রাতেই বিমানবন্দর থেকে এসেছে লম্বা একটি কাঠের বাক্স।
সেই বাক্সেই ঘুমিয়ে আছেন প্রবাসী মুহাম্মদ আরিফ। যার কপালে লেখা ছিলো — ফিরে আসা হবে, তবে নিঃশব্দে, নিস্তব্ধতায়।
আজ সকাল দশটা। মহেশখালীর বড়মহেশখালী ইউনিয়নের দেবাঙ্গাপাড়া গ্রামে, চোখের জলে বিদায় জানালো সবাই। মেধাবী এক সন্তানের শেষযাত্রা হলো আজ। বাবা-মার বুক ফেটে কান্না, ভাই-বোনের আর্তনাদ, বন্ধুদের চোখে একরাশ প্রশ্ন— “আরিফ, তুই এভাবে ফিরলি কেন রে?”
২০২০ সালে এসএসসি, এরপর রামু কলেজ থেকে এইচএসসি। ভবিষ্যতের হাজারো স্বপ্ন বুকভরে নিয়ে আরিফ পাড়ি জমিয়েছিল দুবাইয়ে। পরিবারের অভাব ঘোচানোর দায় কাঁধে নিয়ে ছেলেটা পরিশ্রমে ভরেছিল দিনরাত্রি।
কিন্তু রুমমেটের নির্মম আঘাতে বহুদিন হাসপাতালের বিছানায় পড়ে ছিল সে, শেষমেশ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে… আজ ফিরেছে চিরঘুমে শুয়ে।
প্রিয় মুখগুলোকে আর কখনো ডাকবে না, মায়ের আঁচলে মুখ লুকাবে না, বাবার কাঁধে হাত রেখে বলবে না— “ভয় পেও না আব্বা”।
যে বাড়ি থেকে বিদায় নিয়েছিলো সোনালী সকাল দেখে, সে বাড়িতে আজ বিষাদে মোড়া এক প্রভাত। আঙিনায় ভিড়, অথচ চিরচেনা হাসিটা নেই আরিফের মুখে। তাঁর শরীর আজ নিথর, অথচ কান্না থামছে না কারো।
আহারে জীবন! স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে ওঠা এক তরুণের ফিরে আসা হলো, তবে লাশ হয়ে— বাক্সবন্দি হয়ে— নিজ মায়ের কোলের জন্য।
Discussion about this post