রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে বাংলাদেশিদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। দাবি করা হচ্ছে, রাশিয়ায় কাজ করতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কয়েকজন বাংলাদেশিকে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি মোহাম্মদ ইয়াসিন শেখ নামে এক বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যুর পর বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। এরপর দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিদের স্বজনরা দূতাবাসে ফোন করে এ বিষয়ে খোঁজখবর করছেন।
শুক্রবার ( ১১ এপ্রিল) বার্তাসংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ায় চাকরির প্রলোভনে প্রতারণার শিকার হয়ে বাংলাদেশি যুবকদের রুশ সেনাবাহিনীতে নিয়োগের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। মস্কোতে বাংলাদেশের দূতাবাস জানিয়েছে, অন্তত ডজনখানেক পরিবার তাদের সন্তানদের দেশে ফেরাতে সহায়তা চেয়ে যোগাযোগ করেছে।
২৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ আকরাম হোসেন নামের এক যুবক দেশে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, আমরা ভাবতেও পারিনি যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হবে। তিনি দাবি করেন, তিনি এবং তার ভগ্নিপতি একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সাইপ্রাসে চাকরির আশায় রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। পরে তাদের জানানো হয় যে, শুধু রাশিয়ার ভিসা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে আমরা তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। কিন্তু আমরা কল্পনাও করিনি যে আমাদের এভাবে ফেলে দেওয়া হবে।
এর আগে গত এপ্রিলে ঈদুল ফিতরের সময় এক হৃদয়বিদারক খবরে কেঁপে ওঠে মোহাম্মদ ইয়াসিন শেখের পরিবার। ২২ বছর বয়সী ইয়াসিন ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ায় পাড়ি জমানোর সময় একটি চীনা কোম্পানিতে ইলেকট্রিশিয়ান পদে চাকরি পাবেন বলে ধারণা ছিল। কিন্তু তার পরিবার জানায়, ডিসেম্বর থেকে তিনি রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
ইয়াসিনের চাচা আবুল হাশেম বলেন, ঈদের দিন ইয়াসিনের বন্ধু ফোন করে জানায়, সে মারা গেছে। পরে এক রুশ কমান্ডারও ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত করে। তিনি বলেন, আমরা অনেক টাকা খরচ করে তাকে পাঠিয়েছিলাম, এখন শুধু অপেক্ষা করছি তার মরদেহ ফেরত আসার।
দূতাবাস ও সরকারের অবস্থান বাংলাদেশের মস্কোস্থ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফারহাদ হোসেন বলেন, আমরা ইয়াসিন শেখের বিষয়ে রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়নি।
তিনি জানান, দূতাবাসে আরও বেশ কয়েকটি পরিবার সন্তানদের অবস্থান জানাতে চেয়ে যোগাযোগ করেছে এবং এখন পর্যন্ত প্রায় এক ডজন অনুরোধের উত্তর দেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইপি) সুপারিনটেনডেন্ট মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এই মানব পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ছয়টি মামলা করা হয়েছে। আরও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
পালিয়ে আসা আকরামের অভিজ্ঞতা মোহাম্মদ আকরাম হোসেন জানান, তিনি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমে সৌদি আরবে হজ ভিসায় যান। পরে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করানো হয়, যা তিনি বুঝতেই পারেননি।
তিনি বলেন, পরদিন সকালে আমাদের সামরিক পোশাক পরিয়ে প্রশিক্ষণে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেনেগালের কয়েকজনের সঙ্গে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন আকরাম।
আকরাম বলেন, ফেরত আসতে আমার কয়েক হাজার ডলার খরচ হয়েছে। তবে তার ভগ্নিপতি এখনো রাশিয়াতেই রয়ে গেছেন এবং নিয়মিত ফোন করে দেশে ফেরানোর আকুতি জানাচ্ছেন।
Discussion about this post