দীর্ঘ ১৯ মাস পর কুয়েত থেকে দেশে আসেন নাইমুল ইসলাম। চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানার উত্তর সোনাপাহাড় গ্রামের এই প্রবাসী বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। পরে স্বজনদের সঙ্গে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে চট্টগ্রামে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে তাঁর গাড়িতে হামলা করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুট করে নেয় ডাকাত দল।
বৃহস্পতিবার ভোরে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ফালগুনকরা মাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। যে স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, সেখান থেকে মাত্র ৫০০ গজ দূরেই চৌদ্দগ্রাম থানা। কিন্তু ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা পাননি ওই প্রবাসী। ডাকাতেরা প্রবাসীকে বহন করা গাড়িও ভাঙচুর করেছে।
চৌদ্দগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গুলজার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই থানা ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে এর আগেই ডাকাতেরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রবাসী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি মামলা করেছেন। পুলিশ ঘটনায় জড়িত ডাকাতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে।
প্রবাসী নাইমুল ইসলাম জানান, ১৯ মাস পর বুধবার রাত ১১টায় কুয়েত থেকে বিমানে তিনি ঢাকায় নামেন। এরপর রাত পৌনে ১টার দিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। রাত ২টার পর মেঘনা সেতু পার হয়ে একটি হোটেলে যাত্রাবিরতি দিয়ে আবার রওনা দেন। চৌদ্দগ্রামের ফালগুনকরা মাজার এলাকায় ভোরের দিকে পেছন থেকে একটি অজ্ঞাতনামা পিকআপ বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে তাদের মাইক্রোবাসটিকে চাপা দেয়। মাইক্রোবাসের চালক গাড়ি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে মুখোশ পরা ৮ থেকে ১০ জনের ডাকাত দল ধারালো অস্ত্র নিয়ে মাইক্রোবাসের দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে তাঁকে, তাঁর বাবাকে ও এক স্বজনকে জিম্মি করে প্রবাস থেকে তিনটি কার্টনে আনা মালামাল, লাগেজে থাকা দুই ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, কুয়েতি দিনার—সব লুট করে নিয়ে যায়। পরে তাঁর এক স্বজন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল করলে হাইওয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। পরে তাদের থানায় নেওয়া হয়।
নাইমুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘প্রবাসে এত কষ্টে অর্থ উপার্জন করে মালামাল নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো রকমে প্রাণটা নিয়ে শূন্য হাতে ঘরে ফিরতে হচ্ছে।’ প্রবাসীর বাবা আবুল খায়ের বলেন, ডাকাত দলে ৮ থেকে ১০ জন ছিল। তাদের সবার মুখোশ পরা ও হাতে ধারালো দেশি অস্ত্র ছিল। ডাকাতেরা পিকআপে ত্রিপল মোড়ানো অবস্থায় আসায় তারা বিষয়টি আঁচ করতে পারেননি। মুহূর্তেই ছেলের কষ্টের উপার্জন সব লুট করে নিয়ে যায়।
মাইক্রোবাসের চালক শাহাদাত হোসেন বলেন, ডাকাতেরা পিকআপে ত্রিপল মুড়িয়ে এসে ডান দিকে অতর্কিতভাবে ঢুকে মাইক্রোবাসে ধাক্কা দেয়। এতে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে খাদে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। তিনি অনেক কষ্টে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করেন। এরপর ডাকাতেরা পিকআপ থেকে নেমে গাড়িতে ভাঙচুর করে এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব মাল লুট করে নিয়ে যায়।
চৌদ্দগ্রামের মিয়ার বাজার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পোঁছানোর আগেই ডাকাতেরা পালিয়ে যায়। তারা মহাসড়ক ও আশপাশের এলাকায় থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ডাকাতদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে হাইওয়ে পুলিশ।
Discussion about this post